সুপ্রিম কোটের্র রায়

ভারতে সমকামিতা অপরাধ নয়

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রায় ঘোষণার পর সমকামীদের উচ্ছ¡াস
ভারতে সমকামিতা অপরাধ নয় বলে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোটর্। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোটের্র পঁাচ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায়ে সুপ্রিম কোটের্র প্রধান বলেন, ‘পুরনো ধ্যান-ধারণাকে বিদায় জানিয়ে সব নাগরিককে সমান অধিকার আমাদের দিতে হবে।’ বিচারপতি দীপক মিশ্রের সঙ্গে একমত পোষণ করে একই বক্তব্য রেখেছেন অন্য চার বিচারপতিও। এরআগে ২০১৩ সালে সেকশন ৩৭৭ ধারার অধীনে সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোটর্। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, বিবিসি, এনডিটিভি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সুপ্রিম কোটর্ এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করলে ভারতের বিভিন্ন অংশে সমকামীরা রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস প্রকাশ করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন উদারপন্থি অধিকারকমীর্রাও। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ৫৪৭ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলেছেন, কেউ তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এখনকার সমাজ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নে অনেক বেশি অনুক‚ল। ভারতের সংবিধান একজন সাধারণ নাগরিককে যেসব অধিকার দেয়, তার সবগুলোই এলজিবিটি কমিউনিটির প্রাপ্য।’ এর আগে ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোটর্ এক মামলার রায়ে বলেছিল, সম্মতির ভিত্তিতে দুই প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে যৌন সম্পকর্ অপরাধ নয়। তাদের যৌন সম্পকর্ এ ক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য বিষয়ই নয়। কারণ, যৌন পছন্দ যাই হোক না কেন, দুই প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে যৌন সম্পকের্ আপত্তি জানালে ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়। তবে ২০১৩ সালে সেকশন ৩৭৭ ধারার অধীনে সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোটর্। ওই রায়ের বিরুদ্ধে শীষর্ আদালতে যান একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন। ২০১৩ সালে দিল্লি হাইকোটের্র রায় খারিজ করে সুপ্রিম কোটর্ জানায়, ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা আছে। তবে সমকামিতাকে অপরাধের তালিকামুক্ত করতে গেলে পালাের্মন্টে আইন পাস করতে হবে। এরপর নতুন রিট আবেদন পেশ করে ফের আইনি লড়াই শুরু হয়। ২০১৩ সালের রায় বিবেচনা না করে ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা ফের সামগ্রিকভাবে বিচার করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় শীষর্ আদালত। পিটিশনাররা যুক্তি দেখান, ৩৭৭ ধারা সংবিধানে সন্নিবেশিত অধিকার ও নীতির বিরোধিতা করে। যেমন, আইনে সমতা ও ধমর্, জাতি, লিঙ্গ, বংশ ও জন্মস্থানের ওপর ভিত্তি করে বৈষম্যতার শিকার হওয়া। এদিকে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার সুপ্রিম কোটের্ ৩৭৭ ধারা নিয়ে এই মামলায় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চায়নি। সরকারের অবস্থান জানতে আদালতে বারবার সময় চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু পালাের্মন্টে ৩৭৭ ধারা বাতিলের বিল আনতে চাইলে বিজেপি সে বিষয়ে আলোচনাই করতে দেয়নি। উল্লেখ্য, ১৮৬১ সালে তৈরি এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে সবোর্চ্চ ১০ বছর সাজার আইন ছিল। ভারতীয় দÐবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে’ গিয়ে কেউ পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে তার যাবজ্জীবন কারাদÐ বা ১০ বছরের জেল হতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে জরিমানা। এই আইনে সাজা হওয়ার ঘটনা বিরল। তবে সমকামী অধিকার আদায়ের দাবিতে কাজ করা কমীর্রা জানিয়েছেন, সমকামী হওয়ার কারণে ভারতে অনেকে হয়রানির শিকার হন।