ইসরাইল-আমিরাত-বাহরাইনের চুক্তি হোয়াইট হাউসে

স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নে ছুরিকাঘাত

ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তিন দেশের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন আরবদের সঙ্গে চুক্তিতে সমৃদ্ধ হবে অর্থভান্ডার :নেতানিয়াহু

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলে উড়ছে চার দেশের পতাকা
স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নে ছুরিকাঘাত করে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের উপস্থিতিতে তিন দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর কৌশলগত সখ্যের বিষয়টিও আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা হোয়াইট হাউসে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে নাটকীয় একটি মাসের সমাপ্তি ঘটেছে; যে মাসে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের কয়েক দশকের বিরোধ নিষ্পত্তি ছাড়াই প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পরে বাহরাইন তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। ট্রাম্পের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গলবারের এ অনুষ্ঠানে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুলস্নাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ আল-জায়ানি নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে। এর আগে ১৯৭৯ সালে মিসর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরোধিতা ও তীব্র প্রতিবাদের মুখেও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি আরব দেশের ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা ট্রাম্পের অভাবনীয় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার মেয়াদের পুরোটা সময় জুড়েই এ ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এজন্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎও করেছেন তিনি, যদিও পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে কার্যকর কোনো সমাধানে তিনি পৌঁছাতে পারেননি। ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের 'শান্তিচুক্তি' আগামী ৩ নভেম্বর হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইসরাইলপন্থি অ্যাভেঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টানদের ভোট টানতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। রিপাবলিকান ঘাঁটিগুলোতে জয় নিশ্চিত করতে এই ভোটারদের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের জন্যও এ চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ভেতর দিয়ে দেশ দুটি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার এবং তেহরানের 'ব্যালিস্টিক' ক্ষেপণাস্ত্রের বিকাশ নিয়ে তাদের যৌথ উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল বলেও ধারণা অনেকের। ইরান শুরু থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। 'অতীতের সংঘাতের দিকে নজর না দিয়ে মানুষ এখন অন্তহীন সম্ভাবনায় ভরা প্রাণবন্ত ভবিষ্যতের দিকে নজর দিচ্ছে,' সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছিলেন হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কার স্বামী কুশনারই তেল আবিবের সঙ্গে দুই আরব দেশের চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি আরও আরব দেশকে ইসরাইলের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তিতে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন। তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে হোয়াইট হাউস এখন ওমানকে রাজি করাতে চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশটির সুলতানের সঙ্গে ট্রাম্পের কথাও হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের 'টার্গেটে' উপসাগরের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব থাকলেও রিয়াদ এখনই তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থানে 'প্রস্তুত নয়' বলে ইঙ্গিত মিলেছে। \হ আরবদের সঙ্গে চুক্তিতে সমৃদ্ধ হবে অর্থভান্ডার : নেতানিয়াহু এদিকে, আরবদের সঙ্গে চুক্তির ফলে ইসরাইলের অর্থভান্ডার ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ওয়াশিংটনে যাওয়ার প্রাক্কালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ওয়াশিংটনে এ সফরকে ঐতিহাসিক আখ্যায়িত করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, 'এক মাসের মধ্যে দুই আরব দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এটা অসাধারণ। আর এই করোনার সময় এটা আরও চমকপ্রদ। চুক্তিগুলো ইসরাইলের কোষাগারে লাখ লাখ ডলার নিয়ে আসবে।' মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বলয়ের দুই দেশ আমিরাত-বাহরাইনের সঙ্গে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে নিজের বিচ্ছিন্ন অবস্থা কাটাতে সমর্থ হবে ইসরাইল। এছাড়া আরবদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসায় জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের ব্যাপারেও এখন আরও শক্ত অবস্থান নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটির। কেননা একাধিক মুসলমান দেশ এরই মধ্যে ইসরাইলকে মেনে নিয়েছে। ফলে আল-আকসা মসজিদকেন্দ্রিক মুসলমান বিশ্বের চাপ অনেকটাই হালকা হয়ে গেল দেশটির জন্য।