বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
জলবায়ু পরিবর্তন

নির্বাচনের আগে ফের বিতর্ক উসকে দিলেন ট্রাম্প

বিজ্ঞান সব জানে না, আমি জানি :মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একজন জলবায়ু অগ্নিসংযোগকারী বলে আখ্যা বাইডেনের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
দাবানলের কারণ নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩ নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মুখে দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ককে ফের উসকে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ট্রাম্প দাবানলে ছারখার হওয়া ক্যালিফোর্নিয়া সফরে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানকার একজন কর্মকর্তাকে তিনি বলেন, 'শিগগিরই আবহাওয়া শীতল হতে শুরু করবে।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন ও ওয়াশিংটন রাজ্যে আগস্টের প্রথমদিক থেকে শুরু হওয়া দাবানলে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ হেক্টর ভূমি পুড়ে গেছে এবং অন্তত ৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সংশয়ী ট্রাম্প এই সংকটের জন্য দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। গত সপ্তাহ থেকে দাবানল ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর শীর্ষ শিরোনাম হয়ে ওঠে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবারের আগ পর্যন্ত দাবানল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। একই দিন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ট্রাম্পকে 'একজন জলবায়ু অগ্নিসংযোগকারী' বলে অভিহিত করেছেন। ডেলাওয়্যারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকলে 'যুক্তরাষ্ট্রকে আরও জ্বলন্ত অবস্থায়' দেখা যাবে। পশ্চিম উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার সময় ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাক্রামেন্টোর কাছে একটি বিরতিস্থলে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইরত রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। এ সময়ও দাবানলের জন্য তিনি দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এখানে একজন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্টের প্রতি 'বিজ্ঞানকে অগ্রাহ্য না করার' আবেদন জানান। কিন্তু ওই আবেদন উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'শিগগিরই আবহাওয়া শীতল হতে শুরু করবে, আপনি শুধু দেখেন, বিজ্ঞান আসলে সব জানে, আমি এমনটি মনে করি না।' ব্যাপক দাবানলের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন একটি ফ্যাক্টর কিনা, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিই দায়ী।' অন্যান্য দেশ এমন ব্যাপক দাবানলের মুখোমুখি হয় না বলেও দাবি করেন তিনি। মতের সঙ্গে মিল না হলে যেকোনো তথ্য বাতিল করে দেওয়া ট্রাম্পের জন্য নতুন কিছু নয়। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা অস্বীকার করে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর অনেক দিন পর্যন্ত ট্রাম্প মাস্ক ব্যবহার করেননি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। রাজ্যগুলোতে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকা সত্বেও অর্থনীতির দোহাই তিনি লকডাউন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এমনকি এই মহামারি সময়ের মধ্যেই তিনি নির্বাচনী সভা ও সমাবেশ করে চলেছেন। ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে যাওয়ার আগেই এই আগুনের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ডেমোক্রেটিক গভর্নররা এই দাবানলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকার কথা অস্বীকার করার জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন। ডেমোক্রেটিক গভর্নররা বলছেন, এই দাবানল জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। অনেক গবেষণাতেও বাড়তে থাকা বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে ব্যাপক দাবানলের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদ্যমান দাবানল পরিস্থিতির জন্য দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন। ওয়াশিংটনের গভর্নর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই রাজ্যে রাজ্যে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে। ওরেগন রাজ্যের গভর্নর কেট ব্রাউনও বলছেন একই কথা। এই দাবানল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রত্যেকেরই যথাসম্ভব জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দাঁড়াতে কিছু করা দরকার বলে মত তার। একই সুর ধ্বনিত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের কণ্ঠেও। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই দাবানলই দেখিয়ে দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তর্ক করার আর অবকাশ নেই। ট্রাম্পকে ওরেগনে পদার্পন করে পরিস্থিতি সচক্ষে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ায় সম্প্রতি আগস্ট মাসেই উষ্ণতার রেকর্ড হয়েছে। ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল। ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সোমবার দক্ষিণের জোর বাতাস এবং কম আর্দ্রতার কারণে আগুন আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে