করোনা মহামারি

ভারতে আক্রান্ত অর্ধকোটি ছাড়াল

দেশটিতে ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়াল

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রোগীর জন্য অপেক্ষা এক স্বাস্থ্যকর্মীর
ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য মতে, ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধকোটি ছাড়িয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ২৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ৮২ হাজার ১২৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। সংবাদসূত্র :আল-জাজিরা, এনডিটিভি, এবিপি নিউজ এদিকে, মঙ্গলবার রাজ্যসভায় দেওয়া ভাষণে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, 'কোভিডের সঙ্গে লড়াই শেষ হতে এখনো অনেক দেরি আছে।' তিনি আরও বলেন, 'করোনা প্রতিরোধে এবং কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে।' পরপর কয়েক দিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫ হাজার পেরোলেও মঙ্গলবার সেই সংখ্যাটা কিছুটা কমে হয়েছে ৮৩ হাজার ৮০৯। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গবের মতে, লকডাউনের জন্যই ভারতে মৃতু্যহার লাগামছাড়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রুটিন ব্রিফিংয়ে ভার্গব বলেন, 'ইউরোপ-আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে, সেখানে একটা সময়ে সংক্রমণ চরমে পৌঁছেছিল। ওই শীর্ষে ওঠার সময়টায় প্রচুর মৃতু্য ঘটেছিল, তা সে স্পেন, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জার্মানি বা যে দেশই হোক না কেন। সৌভাগ্যবশত, এর থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসের অত্যন্ত কার্যকরী লকডাউনের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ফলে সংক্রমণ সেই অর্থে বিরাট কোনো শীর্ষে পৌঁছায়নি।' কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও ফের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ইদানীং প্রকাশ্যে আসছে। ভার্গবের মতে, দ্বিতীয়বার সংক্রমণের বিষয়টি 'খুব বিরল'। তা ঘটতে পারে, যেমনটা দেখা গেছে হংকংয়ে। তবে এ নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই। সম্প্রতি আইসিএমআরের জরিপে দেখা গিয়েছিল, মে মাসেই ভারতের ৬৪ লাখ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। তবে ভার্গবের বক্তব্য, ওই জরিপ অনেক পুরানো। নতুন জরিপ চলছে। তার ফলাফল পেলে বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই স্পষ্ট হবে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সুস্থতার হার সর্বাধিক। দেশটিতে সুস্থতার হার এখন ৭৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। মোট সংক্রমিতের সংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ এখন সক্রিয় রোগী। তাদের ৬০ শতাংশ রয়েছেন পাঁচটি রাজ্যে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু। ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম। ভূষণ জানান, ভারতে প্রতি দশ লাখে সংক্রমিতের সংখ্যা তিন হাজার ৫৭৩, বিশ্বে যে হার তিন হাজার ৭০৪। ভারতে প্রতি দশ লাখে মৃতু্যহার ৫৮, বিশ্বে যা এখন ১১৮। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, মাঝারি উপসর্গের এবং মৃদু উপসর্গ কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোগীদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রেমডেসিভিয়ারও অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ পস্নাজমা দেওয়া হচ্ছে গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদের। করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা ও মাঝারি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে গুড়ুচি, পিপলি, যষ্টিমধু ও বিভিন্ন ভেষজ গাছপালা মিলিয়ে তৈরি ওষুধের (আয়ুষ-৬৪) পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতু্য ২ লাখ ছাড়াল এদিকে, করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্ত ও মৃতু্যতে দেশটির ধারেকাছেও নেই কোনো দেশ। গত কয়েক মাস ধরেই টানা করোনা সংক্রমণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ট্রাম্পের দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যেই করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগী ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৪। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৪ হাজার ১৬৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। অপরদিকে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য দেখেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নিউইয়র্ক এবং জর্জিয়ায় সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৯৭ লাখ ছাড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ জন। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। আমেরিকার দুই মহাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ এখনও দ্রম্নত বাড়ছে। অন্যদিকে ইউরোপকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে করোনা কিছুটা স্তিমিত হলেও সেখানে আবারও নতুন করে রোগটির প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রম্নত বাড়ছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯৯। এর মধ্যে এক লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ২১৪। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, 'বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।'