যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

ভোটারদের কৌশলী প্রশ্নবাণে ধরাশায়ী হলেন ট্রাম্প

করোনা এমনিতেই চলে যাবে ভ্যাকসিনের দরকার হবে না : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে ফিরবেন বাইডেন

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন
দলীয় সমাবেশ হোক বা সংবাদ সম্মেলন, সমর্থকদের কাছ থেকে প্রশংসার বাণী শুনতে ভালোবাসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেউ সমালোচনা করলে বা মনের মতো প্রশ্ন না করলে তার ক্ষেপে যাওয়ার নজির আছে বহু। অনেকবারই কৌশলী প্রশ্নের মুখে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরের বদলে লেজেগোবরে অবস্থা পাকিয়েছেন এ রিপাবলিকান নেতা। একই অবস্থা হয়েছে মঙ্গলবার পেনসেলভেনিয়ায় এবিসি নিউজের টাউন হল আয়োজনেও। সংবাদসূত্র : ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার, আল জাজিরা এদিন ফিলাডেলফিয়ার ঐতিহাসিক ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে ভোটারদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। ৯০ মিনিটের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবিসি নিউজের জর্জ স্টেফানোপোলোস। অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পান এখনো কাকে ভোট দেবেন সিদ্ধান্ত নেয়নি ভোটাররা। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় সবার শীর্ষে ছিল করোনাভাইরাস মহামারি ইসু্য। বরাবরের মতো এদিনও করোনা মোকাবিলায় নিজের দক্ষতার গুণগান গেয়েছেন ট্রাম্প। তবে ছেড়ে কথা বলেননি ভোটাররাও। পেনসেলভানিয়ার অনিশ্চিত এক ভোটার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, আপনি যদি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব, তাহলে মহামারিকে অবহেলা করলেন কেন? এর উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমি এটিকে অবহেলা করিনি। বরং অনেক সময় কাজের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।' কিছুদিন আগেই ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের কাছে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তিনি জনগণকে আতঙ্কিত করতে চাননি বলে ইচ্ছা করেই মহামারিকে গুরুত্বহীন বলেছেন। এ কথার রেকর্ডিংও রয়েছে উডওয়ার্ডের কাছে। কিন্তু মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে সেই কথা অস্বীকার করে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমি চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলাম। ইউরোপের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা দিলাম। যদি নিষেধাজ্ঞা না দিতাম তাহলে আরও কয়েক হাজার মানুষ হারাতে হতো।' তিনি বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় আমরা খুবই ভালো কাজ করেছি। এটাকে আপনি প্রতিভা বলেন বা ভাগ্য, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছি।' এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প দাবি করেন, করোনাভাইরাস এমনিতেই চলে যাবে, কোনো ভ্যাকসিনের দরকার হবে না। এ কথায় অবাক হয়ে সঞ্চালক জর্জ স্টেফানোপোলোস জিজ্ঞেস করেন, 'ভাইরাস ভ্যাকসিন ছাড়াই চলে যাবে?' ট্রাম্প বলেন, 'অবশ্যই, একটা সময় পর। আর আপনাদের মধ্যে 'হার্ড মেন্টালিটি' (গুচ্ছ মানসিকতা) তৈরি হবে।' 'হার্ড মেন্টালিটি' বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, হার্ড ইমিউনিটি (দলবদ্ধ রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা) বলতে গিয়ে ভুল করে মেন্টালিটি বলে ফেলেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক ভোটার ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রচারণার স্স্নোগানে বলা হচ্ছে 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' অর্থাৎ আমেরিকাকে আবারও মহান করো। কিন্তু আমেরিকায় যেখানে বর্ণবৈষম্য বিদ্যমান সেখানে দেশটি মহান ছিল কবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের দেখতে হবে কোনটা মহান ছিল? আমার আশা, এখানে কোনো বৈষম্যের সমস্যা নেই। বলতে পারি, আমার মধ্যে এ সমস্যা নেই, কারণ সব বর্ণের মানুষের প্রতি, সবার প্রতি আমার প্রচুর সম্মান রয়েছে। সেটার জন্যই এই দেশ মহান।' ভোটারদের পাশাপাশি ট্রাম্পকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালকও। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাণহানির ঘটনা পদ্ধতিগত বর্ণবৈষম্যের ফল কিনা জানতে চান তিনি। ট্রাম্প সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে কিছুটা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলেন, সন্ত্রাস থামানোর ক্ষমতা আমাদের পুলিশদেরই দিতে হবে। জর্জ স্টেফানোপোলোস প্রশ্ন করেন, আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েও বার বার ডেমোক্রেট-শাসিত শহর, ডেমোক্রেট-শাসিত অঙ্গরাজ্য বলেন কেন? ওইসব রাজ্য বা শহরের প্রতি কি আপনার কোনো দায়িত্ব নেই? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্রেট-শাসিত অঙ্গরাজ্যগুলোই খারাপ করছে। যদি নিউইয়র্কের দিকে তাকান, ইলিনয়েসের দিকে তাকান, তারা খুব খারাপ করছে। তাদের এমন বিষয় রয়েছে যা রিপাবলিকানদের নেই, যেমন- সন্ত্রাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ময়দান পেনসেলভেনিয়া। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ অঙ্গরাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো হাজির হয়েছেন ট্রাম্প। একই জায়গায় আগামী বৃহস্পতিবার ভোটারদের মুখোমুখি হচ্ছেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচিত হলে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে ফিরবেন বাইডেন এদিকে, আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি পরমাণু সমঝোতাকে 'কঠিনভাবে মেনে চলার চুক্তি' বলেও মন্তব্য করেন। জো বাইডেন বলেন, 'আমি ইরানকে কূটনীতির পথে ফিরে আসার প্রস্তাব দেব। যদি ইরান সমঝোতায় ফিরে আসে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও তাতে যুক্ত হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমি আর এখন কিছু পদক্ষেপ নেব যাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের করোনাবিরোধী লড়াই বাধাগ্রস্ত না হয়। এরপর আমি ধীরে ধীরে ট্রাম্পের আরোপ করা অসম্মানজনক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেব।'