ভারত-চীন সংঘাত

লাদাখ নিয়ে যুদ্ধের সুর রাজনাথের কণ্ঠে

এই প্রথম ভারতের কোনো মন্ত্রী 'যুদ্ধ' শব্দটি ব্যবহার করলেন শীত যত বাড়বে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে সীমান্তে

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং
এই প্রথম লাদাখ প্রসঙ্গে কথা বলার সময় ভারতের কোনো মন্ত্রী 'যুদ্ধ' শব্দটি ব্যবহার করলেন। 'যুদ্ধ শুরু করা আমাদের হাতে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তা শেষ করা আর কারও হাতে থাকে না।' লাদাখ প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় বিবৃতি দেওয়ার সময় এভাবেই ভারত-চীন সাম্প্রতিক সংঘাতকে ব্যাখ্যা করলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। লোকসভায় আগেই এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দেন তিনি। লাদাখ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরও দেন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ রাজনাথকে ইউপিএ আমলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ভারতীয় সেনারা লাদাখ সীমান্তে পেট্রলিং করতে পারছে কি না। কারণ, ওই পেট্রলিংকে কেন্দ্র করেই দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ হয়। রাজনাথ জানিয়েছেন, কোনো দেশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পেট্রলিং বন্ধ করতে পারবে না। তার জন্য যত দূর যাওয়া দরকার, ভারত যেতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কারও কাছে মাথা নত করা হবে না। অন্য কোনো দেশকেও ভারত তার সামনে মাথা নত করতে বলবে না। গত সপ্তাহেই মস্কোয় পর পর দুটি বৈঠক হয়েছিল ভারত এবং চীনের। প্রথমে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর পাঁচটি পয়েন্টে লাদাখ সংকট কাটানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাঁচটি পয়েন্ট নিয়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বৈঠক হওয়ারও কথা ছিল। ঠিক হয়েছিল, দুই দেশই সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু কীভাবে করবে, তার সিদ্ধান্ত নেবেন সেনা কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে রাজনাথ যা বললেন, তার সঙ্গে ওই সমঝোতা চুক্তি মিলছে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লাদাখে ভারত এবং চীনের সীমান্ত বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক আছে। কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত চিহ্নিত নয়। কারণ জনমানবহীন শীতল মরুভূমিতে হাওয়ায় পাথরও সরে যায়। এছাড়া যে কাল্পনিক রেখাকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বলে মনে করা হয়, তা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে তীব্র বিতর্ক আছে। ফলে বিতর্কিত অঞ্চলে দুই দেশই ক্ষমতা মতো পেট্রলিং করে। এটাই জমির ওপর ক্ষমতা জারি রাখার অন্যতম প্রক্রিয়া। বরাবর ওই পেট্রলিং নিয়েই দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত হয়। প্যাংগং, ডেপসাং, গোগরা, হটস্প্রিং অঞ্চলে এটাই সংঘাতের কারণ। জুন মাসে গালওয়ানেও ঠিক এই কারণেই সংঘাত হয়েছে এবং ২০ ভারতীয় সেনার প্রাণ গেছে। যদিও গালওয়ান বিতর্কিত অঞ্চল ছিল না। রাজনাথের কথা, যদি পেট্রলিং চলতে থাকে, তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনায় উঠে আসা সমঝোতা সম্ভব নয়। পেট্রলিং বন্ধ না করলে দুই দেশের বাহিনী পেছনে যেতে পারবে না। ভারতীয় সেনা সূত্রের বক্তব্য, এপ্রিল মাসের পর থেকে চীন ডেপসাং অঞ্চলে অনেকটাই ঢুকে এসেছে। প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তেও একই ঘটনা ঘটেছে। আবার প্যাংগংয়ের দক্ষিণে ভারত দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ের দখল নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেনা পিছিয়ে নিতে হলে বিতর্কিত অঞ্চলে পেট্রলিং বন্ধ করতে হবে। রাজনাথ বলেন, পেট্রলিং বন্ধ হবে না। তাহলে সমঝোতারও কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যা বলেছেন, যেভাবে 'যুদ্ধ' শব্দটি কৌশলে ব্যবহার করেছেন, তা থেকে অনেকেই মনে করছেন, আপাতত সমঝোতায় যাওয়ার কথা ভাবছে না ভারত। বরং সময় নেওয়ার চেষ্টা করছে। দেখতে চাইছে, চীন এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়। কারণ, এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে সমঝোতা করে সেনাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পিছিয়ে নিলে তা ভারতের ক্ষতি বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ বছর ধরে ডেপসাং এবং প্যাংগং অঞ্চলে ক্রমাগত নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে চীন। চলতি বছরের গোড়াতেও তারা সে কাজ করেছে। ফলে এখন সমঝোতা হলে চীন বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে। রাজনাথ বলেন, তাদের সরকার আগের মতো নয়। যেকোনো প্রক্রিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ভারতের মাথা নত হতে তারা দেবেন না। বাস্তবে যদি তাই ঘটে, তাহলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শীত যত বাড়বে, পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হবে লাদাখে।