যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

রাশিয়ার বিরুদ্ধে আবারও হস্তক্ষেপের অভিযোগ

হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্পষ্ট হলে রাশিয়াকে মূল্য চুকাতে হবে : বাইডেন এগিয়ে থাকতে মাদক নিচ্ছেন বাইডেন, তোপ ট্রাম্পের

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত করতে রাশিয়া তার প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চালিয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তার পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সত্ত্বেও ট্রাম্প শিবির ও রাশিয়া তা অস্বীকার করে এসেছে। এবারের নির্বাচনের আগেও এমন পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, ডয়চে ভেলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতেও রাশিয়া তৎপর হয়ে উঠেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এফবিআই-এর প্রধান ক্রিস্টোফার রে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন সম্পর্কে লাগাতার ভুয়া খবর সরবরাহ করে রাশিয়াবিরোধী শিবিরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। তার মতে, এর ফলে চলতি বছরের নির্বাচনের ফলের ওপর আস্থা কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এফবিআই-এর প্রধান রাশিয়ার কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও কিছু অভিযোগ আনেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রাশিয়া-বিরোধিতা খর্ব করতেও মস্কো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু রাশিয়া নয়, চীন ও ইরানও আগামী ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দা-প্রধান ক্রিস্টোফার। 'ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স' ও 'সিকিউরিটি সেন্টার'র প্রধান গত ৭ আগস্ট কংগ্রেস কমিটির সামনে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। এফবিআই-প্রধান বলেন, মার্কিন প্রযুক্তি ও অন্যান্য গোপন তথ্য পেতে চীন এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, তার সংস্থাকে প্রতি ১০ ঘণ্টা পরপর নতুন তদন্ত শুরু করতে হচ্ছে। ট্রাম্প নিজে আসন্ন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছেন। 'মেইল-ইন' ব্যালটের বেড়ে চলা ব্যবহারের কারণে তিনি কোনো ভিত্তি ছাড়াই কারচুপির আশঙ্কা করছেন। করোনা মহামারির কারণে ভোটারদের একটা বড় অংশ এবার ডাকযোগে ভোট দেবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। গত নির্বাচনেও প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভোটার এভাবে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা সেই প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ দেখছেন না। এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন ওয়াশিংটনের টাউন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। এই প্রথম তিনি প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন। বাইডেন বলেন, 'এবারের নির্বাচনেও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্পষ্ট হলে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়াকে তার মূল্য চোকাতে হবে।' রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ইঙ্গিতও দেন তিনি। তার মতে, কোনো বিদেশি শক্তি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করবে। লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে মাদক নিচ্ছেন বাইডেন, তোপ ট্রাম্পের এদিকে, আর কিছুদিন পরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে মার্কিনিরা। প্রতীক্ষিত দিনটি এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম জো বাইডেন তরজাও। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক এই বিতর্ক। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পরোক্ষভাবে বাইডেনের বিরুদ্ধে মাদকসেবনের অভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেশ একটু রহস্য তৈরি করে ট্রাম্প দাবি করেন, 'কয়েকদিন আগেও নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে থাকাকালীন ম্যাড়ম্যাড়ে শোনাত বাইডেনের ভাষণ। ও একটা অপদার্থ। তবে সাম্প্রতিক কিছু বক্তৃতায় দেখা গেছে, বাইডেন অসম্ভব উন্নতি করছেন। কীভাবে? আমার মনে হয়, কিছু একটা না নিলে তার কথা বা চিন্তাভাবনায় এতখানি স্বচ্ছতা আসার কথা নয়।' তবে শুধু বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। কয়েকদিন আগে দুইজনের মুখোমুখি বিতর্কসভা শুরুর আগে বাইডেনের মাদক পরীক্ষার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প নিজেও মাদক পরীক্ষা করানোর জন্য রাজি ছিলেন। এদিকে, ট্রাম্পের এমন অভিযোগের জবাবে বাইডেনের বক্তব্য, 'এসব মূর্খের মতো কথার উপযুক্ত জবাব দেব বিতর্কসভাতেই।' উলেস্নখ্য, যতই দিন যাচ্ছে, মার্কিন মসনদে ফেরার লড়াই ততই কঠিন হয়ে পড়ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন সামনে এসেছে। যাতে জানা গেছে, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সবকিছু জেনেও ইচ্ছা করে মার্কিন নাগরিকদের ভুল তথ্য দিয়েছিলেন ট্রাম্প। একই অভিযোগ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসও। পাশাপাশি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিহত মার্কিন সেনাদের ট্রাম্প নাকি 'বোকা' ও 'হেরো' বলে মন্তব্য করেছেন। এরপরই দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের তুলনায় ট্রাম্প প্রায় ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েছেন। নথিভুক্ত ভোটারদের ওপর ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর এক জরিপ চালানো হয়। যাতে বাইডেনের পক্ষে রয়েছেন ৪৯ শতাংশ ভোটার। ট্রাম্পের পক্ষে ৩৯।