যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ২০২০

আগাম ভোটগ্রহণ চার অঙ্গরাজ্যে

জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক বাইডেন ভোটের আগে ট্রাম্পের 'তুরুপের তাস' করোনা ভ্যাকসিন

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের লাইন
যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটগ্রহণ হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালের দিকে মিনেসোটার পাশাপাশি ভার্জিনিয়া, সাউথ ডাকোটা ও ওয়াইয়োমিং রাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জয়ী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা নভেম্বরের ৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যে একযোগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার তারিখ থাকলেও আগাম ভোটের সুবিধা থাকায় চার অঙ্গরাজ্যের নিবন্ধিত ভোটাররা মোটামুটি ছয় সপ্তাহ আগেই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার আগাম ও ডাকযোগে তুলনামূলক বেশি ভোট পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার আগাম ভোট শুরু হওয়ায় মিনেসোটায় মুখোমুখি প্রচারণা চালিয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প তার তৎকালীন ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের কাছে রাজ্যটিতে ১.৫ শতাংশ পয়েন্টে হেরেছিলেন। সম্প্রতি রাজ্যটির মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গের নির্মম হত্যাকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। এরপর পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ে সেই বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিক্ষুব্ধদের উগ্র বামপন্থি আখ্যা দিয়ে শহরটিতে আইন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বাইডেন জয়ী হলে ওইসব উগ্র-বামপন্থিরা আরও প্রশ্রয় পাবে। শুক্রবার হাজারও সমর্থকের সামনে ট্রাম্প বলেন, 'মিনেসোটায় তার অর্থনৈতিক রেকর্ডের কারণেই জয়ী হবেন তিনি।' বাইডেন শুক্রবারের নির্বাচনী প্রচারে করোনা মহামারিতে রাজ্যটির অর্থনৈতিক ধসের চিত্র তুলে ধরেন। এজন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন তিনি। বাইডেন বলেন, 'রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট করোনা মোকাবিলায় তেমন কিছুই করেননি। ট্রাম্প তার দায়িত্ব পালনের অভিনয় করাও বন্ধ করে দিয়েছেন।' জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবকাঠামো উন্নয়নে দুই লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন বাইডেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও কাজ করার কথা বলেছেন তিনি। মিনেসোটার মিনেয়াপোলিসে ভোটকেন্দ্র খোলার ৩০ মিনিটের মধ্যে ৪৪ জন ভোট দিয়েছেন। কয়েকজন ভোটার জানিয়েছেন, ভিড় এড়াতে সকাল-সকাল ভোট দিতে চলে আসেন তারা। মনেসোটায় জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন বাইডেন। জরিপবিষয়ক ওয়েবসাইট 'রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস' অনুসারে, শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যটিতে ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে ১০.২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বাইডেন। বর্ণবৈষম্য ও পুলিশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। মার্কিন গণমাধ্যমের মতে, মিনেসোটায় জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা বাইডেনের নির্বাচনী সম্ভাবনার প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলে না। আদতে এর চেয়েও বেশি এগিয়ে আছেন তিনি। সাবেক শিল্পাঞ্চল 'রাস্ট বেল্ট' রাজ্যগুলোয়-মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনিসিলভেনিয়াতেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই তিন রাজ্যেই হিলারির কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। আগাম ভোটের প্রথম দিনই ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স ও আরলিংটনের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লাইন দেখা গেছে। সেখানকার নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক। ভোটারদের সবার মুখেই ছিল মাস্ক। এদিকে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ কোটি বাসিন্দাকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে শুক্রবার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে অবশ্য চলতি বছরের অক্টোবরেই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে বলে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'প্রশাসনের অনুমোদন পেলেই যুক্তরাষ্ট্রের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। প্রতিমাসে কয়েক লাখ করে ভ্যাকসিন দেওয়ার মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই সকল মার্কিনিকে দেওয়ার মতো ভ্যাকসিনের ডোজ আমাদের কাছে থাকবে।' এদিকে, ট্রাম্প যখন ৩ নভেম্বরের ভোটের আগে ভ্যাকসিনকে 'তুরুপের তাস' করে প্রচার চালাচ্ছেন, তখন দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তার তীব্র সমালোচনা করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন। তিনি বলেন, মহামারির আতঙ্ককে ট্রাম্প যেভাবে হেলাফেলা করেছেন তা 'অপরাধ'। ট্রাম্পের প্রশাসনকেও 'একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে তুলাধোনা করেছেন বাইডেন।