শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা মহামারি

যুক্তরাজ্যে আসছে দ্বিতীয় ঢেউ, শঙ্কিত বরিস

ইরানে মহামারির তৃতীয় দফা প্রাদুর্ভাবের হুঁশিয়ারি লকডাউনের কবলে মাদ্রিদের সাড়ে ৮ লাখ বাসিন্দা
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
ভ্যাকসিন সেন্টারে বরিস জনসন

ব্রিটিশ সরকারের 'সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রম্নপ ফর ইমার্জেন্সিজ' (স্যেজ)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন দুই থকে সাত শতাংশ হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এই গতি আরও দ্রম্নততর হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এমন পরিস্থিতির মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করছে যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে শঙ্কিত তিনি। সংবাদসূত্র : ডেইলি মেইল, বিবিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত কেবল চার শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর সংক্রমণের হার (আর-ফিগার) ১.১ থেকে ১.৪। ওপেন ইউনিভার্সিটির ফলিত পরিসংখ্যানের প্রফেসর কেভিন ম্যাকনওয়ে সর্বশেষ 'আর' ফিগারকে নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বলে বর্ণনা করেছেন। এ অবস্থায় নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তাতে এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীরা। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তারা সবকিছুই পর্যালোচনার মধ্যে রাখবেন। অক্সফোর্ডের কাছে ভ্যাকসিন সেন্টারের অবকাঠামো পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে যে কথা বলে আসছি, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা এখন দেখছি দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণের ঢেউ। আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি ফ্রান্স, স্পেন এবং ইউরোপজুড়ে। আমি এ নিয়ে ভীত-শঙ্কিত। অনিবার্যভাবে আমরাও এই অবস্থার দিকে যাচ্ছি।' সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় 'কঠোর লকডাউন' দিতে চান না জানালেও সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া লাগতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি সামলাতে যুক্তরাজ্য তিন স্তরে বিধিনিষেধ দেওয়ার কথা ভাবছে। এর মাধ্যমে জাতীয়ভাবে লকডাউন না দিয়ে এক বাড়ির বাসিন্দার সঙ্গে অন্য বাড়ির বাসিন্দাদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ এবং বার-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সময় কমিয়ে আনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম স্তরে কেবল সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই স্তরে যেসব বিধিনিষেধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে, তা এখনই ইংল্যান্ডের অধিকাংশ এলাকায় আছে। দ্বিতীয় স্তরে বিভিন্ন ভেনু্যতে কারফিউ এবং এক বাড়ির বাসিন্দার সঙ্গে অন্য বাড়ির বাসিন্দাদের দেখা সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয়ভাবে এ ধরনের বিধিনিষেধ বলবৎ আছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে তৃতীয় স্তরে দেওয়া হবে লকডাউনসহ কঠোর সব বিধিনিষেধ। আলোচনা-পর্যালোচনার পর শেষ পর্যন্ত এই তিন স্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা অনুমোদিত হলে অঞ্চলভেদে কর্তৃপক্ষ পৃথক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পাবে। তবে 'দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে' যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ অংশ দ্বিতীয় স্তরের বিধিনিষেধই দেখতে যাচ্ছে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের। শনাক্ত রোগী বাড়তে থাকায় ৯ লাখ বাসিন্দার লন্ডন শহরে ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতোই বিধিনিষেধ দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শহরটির মেয়র সাদিক খান। শীতের সময় করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে- এ শঙ্কায় কর্মকর্তারা বসন্তকাল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে। ইরানে করোনার তৃতীয় দফা প্রাদুর্ভাবের হুঁশিয়ারি এদিকে, ইরানে করোনাভাইরাসের তৃতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। দেশটিতে আবারও দৈনন্দিন আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চীনের পর ইরানেই প্রথম করোনার ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। মে মাসের প্রথম দিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন কর্মকর্তারা। তবে জুনে দেশটিতে শুরু হয় ভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ। ওই সময় থেকে আগস্টের শেষ নাগাদ দেশটিতে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি করোনা আক্রান্তের মৃতু্য হয়। শুক্রবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৪৯ জন। একই সময় ১৪৪ জন আক্রান্তের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৫২-তে পৌঁছাল। লকডাউনের কবলে মাদ্রিদের সাড়ে ৮ লাখ বাসিন্দা অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের ছোবলে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্পেন। সেখানে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়েছে সংক্রমণ, বিশেষ করে রাজধানী মাদ্রিদে। করোনার এই বিস্তার ঠেকাতে রাজধানীর বড় অংশে ফের লকডাউন জারি করা হচ্ছে। তাতে মাদ্রিদের সাড়ে ৮ লাখ বাসিন্দা আবারও নানা বিধিনিষেধের মুখোমুখি হচ্ছে। সোমবার থেকে মাদ্রিদ অঞ্চলের লাখ লাখ বাসিন্দার ভ্রমণ ও জনসমাবেশ সীমিত করা হচ্ছে। ওইদিন রাজধানীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭টি জেলায় লকডাউন জারি করা হচ্ছে। বাসিন্দারা কেবল তাদের কর্মক্ষেত্র ও স্কুলে যেতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে