পাঁচ মাসে ২ কোটির বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন ভারতে

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা মহামারির মধ্যে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট- এই পাঁচ মাসে ভারতের প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ মাসিক বেতনভুক চাকরিজীবী তাদের কাজ হারিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার এই চিত্র উঠে এসেছে 'সেন্টার ফর মনিটরিং ইনডিয়ান ইকোনমি' (সিএমআইই) নামের একটি পরামর্শক সংস্থার পরিসংখ্যানে। সিএমআইই-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে যেখানে বেতনভুক চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৬০ লাখ, সেখানে আগস্টে তা নেমে এসেছে ছয় কোটি ৫০ লাখে। অর্থাৎ, কমেছে দুই দশমিক এক কোটি। লকডাউনে এপ্রিল-মে মাসে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। জুলাই ও আগস্টে সেই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৮ এবং ৩৩ লাখ। তবে দেশটির চাকরির বাজারে এই ধস শুধু মহামারির কারণে নয়। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। করোনায় তা নাজেহাল হয়ে পড়েছে। জিডিপির আকার চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সংকুচিত হয়েছে। ফলে দেশটির আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। করোনার বছরে ভারতে গড় বেতন বৃদ্ধির হার কোন্‌ তলানিতে ঠেকেছে, সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে 'ডেলয়েট-তুশ'। সংস্থাটির অংশীদার আনন্দরূপ ঘোষ বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতির রেখচিত্র এবং মুনাফার হার নিম্নমুখী হওয়ার কারণে ভারতে গড় বেতন বৃদ্ধির গতির এই ঢিমেতাল।' তিনি আরও বলেন, 'যদিও এ বছরে করোনা বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার মুখে ঠেলে দেওয়ার পর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, কিংবা একেবারে সামান্য হারে তা দেওয়া ছাড়া অন্য পথ তেমন খোলা ছিল না নিয়োগকারীদের সামনে।' অর্থাৎ, করোনার কারণে চলতি বছর চাকরিজীবীদের ভুগতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বেহাল অর্থনীতির খেসারত গত কয়েক বছর ধরেই দিচ্ছেন তারা। অথচ চাকরিজীবীদের কেনাকাটার ওপরে যেহেতু বহু পণ্য-পরিষেবার চাহিদা অনেকখানি নির্ভরশীল, তাতে টান পড়ার মাসুল গুণে ঘুরে দাঁড়াতে খাবি খাচ্ছে দেশটির অর্থনীতিও। লকডাউন শিথিল হতে শুরু করার পর অসংগঠিত ক্ষেত্রে কিছুটা গতি ফিরেছে। মূলত পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে চালু হওয়া সরকারি প্রকল্পে রোজগারের জন্য নাম লিখিয়েছেন কাজ খোয়ানো অনেকে। ফলে সব মিলিয়ে, ওই ক্ষেত্রে কর্মরতের সংখ্যা বরং কিছুটা বেড়েছে। অথচ তার ঠিক উল্টো ছবি চাকরির ক্ষেত্রে। সিএমআইই পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষের তুলনায় গত জুলাইয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সংখ্যা যেখানে নিট ৮০ লাখ (দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ) বেড়েছে, সেখানে শুধু লকডাউনের সময়েই বেতনভুক চাকরির সংখ্যা কমেছে এক কোটি ৮৯ লাখ বা ২২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে বেতনভুক চাকরি বেড়েছিল মাত্র এক দশমিক ছয় শতাংশ। ২০১৮-১৯ সালে ০.০১ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে উল্টো চাকরির সংখ্যা সরাসরি কমেছে ১.৮ শতাংশ। যে কারণে, ২০১৬-১৭ সালে দেশে যেখানে ৮.৬৩ কোটি চাকরি ছিল, সেখানে লকডাউনের আগেই ২০১৯-২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৬১ কোটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন বছরের ব্যবধানে যদি ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে চাকরির সংখ্যা কমে যায়, তাহলে অর্থনীতি চট করে চাঙ্গা হওয়া কঠিন। কারণ, দেশটিতে নির্দিষ্ট বেতনভুক চাকরিতেই মূলত মাসিক আয় তুলনায় বেশি। কিছুটা বেশি চাকরির স্থায়িত্ব এবং সুযোগ-সুবিধাও। তাই অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের তুলনায় এদের ক্রয় ক্ষমতা বেশি। নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় মন্ত্রিসভার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকড়ির দাবি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ কোটি নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে শুধু ছোট ও মাঝারি শিল্পেই। আর কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কটাক্ষ, 'কম বয়সিরা হাতে কাজ চান। আর সরকার দিচ্ছে শুধু ফাঁকা বুলি।' সংবাদসূত্র :এবিপি নিউজ