ভারতের রাজ্যসভা

ব্যাপক বিরোধিতায় পাস কৃষি বিল

কৃষি বিল কৃষকদের মৃতু্য পরোয়ানা :কংগ্রেস হরিয়ানায় সড়ক অবরোধ করে কৃষকদের বিক্ষোভ

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিরোধিতার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। রোববার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অধিবেশনে তা মিলেও গেল। বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার 'কণ্ঠভোটে' পাস করিয়ে নিল কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত বিতর্কিত বিল। সংবাদসূত্র :এনডিটিভি, এবিপি নিউজ করোনা আবহের মধ্যেই এদিন সামাজিক দূরত্ব-বিধি কার্যত শিকেয় তুলে স্পিকারের আসনের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীদলীয় এমপিরা। 'জবাবে' জড়ো হয়ে বিলের পক্ষে স্স্নোগান দেন সরকারপক্ষের এমপিরাও। শুধু পার্লামেন্টের ভেতরেই নয়, রাজধানী দিলিস্নসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এদিন কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত তিনটি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এ সংক্রান্ত তিনটি বিলে কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় ব্যবসায়ী এবং করপোরেট সংস্থাগুলোকে একতরফাভাবে ফসলের দাম নির্ধারণ এবং মজুতদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে। যদিও এদিন সকালে বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদের মধ্যে রাজ্যসভায় বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় কৃষি উন্নয়ন, কৃষক কল্যাণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং বলেন, 'কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার পথে এই বিল কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।' বিল পাস হওয়ার পর বিজপি সভাপতি জে পি নাড্ডার মন্তব্য, 'মোদিজির নেতৃত্বে ভারতীয় কৃষকেরা ৭০ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেলেন।' অন্যদিকে, কংগ্রেসের অভিযোগ, এই বিল আসলে 'কৃষকদের মৃতু্য পরোয়ানা'। বিতর্কে অংশ নিয়ে রাজ্যসভার ডিএমকে এমপি টি. কে. এস. ইলানগোভানের মন্তব্য, 'ওই কৃষি বিল ফের কৃষকদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে।' এমনকি বিজেপির সবচেয়ে পুরানো সহযোগী শিরোমণি অকালি দলের এমপি নরেশ গুজরাল কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'পাঞ্জাবের কৃষকদের দুর্বল ভেবে ভুল করবেন না। তারা কৃষকবিরোধী এই বিল মেনে নেবেন না।' 'অত্যাবশ্যক পণ্য আইন' সংশোধন, 'কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন' এবং 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি' সংক্রান্ত বিল তিনটি এরই মধ্যে লোকসভায় পাস হয়ে গেছে। এদিন 'কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন' এবং 'কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি' সংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে রাজ্যসভায়। শুধু বিরোধী নয়, বৃহস্পতিবার লোকসভায় কৃষি বিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন অকালি দলের প্রধান প্রকাশ সিং বাদলের পুত্রবধূ হরসিমরত কউরও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগও করেছেন তিনি। হরিয়ানায় বিজেপির সহযোগী জেজেপি'ও বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। বিল নিয়ে বিতর্ক এতটাই মাথা চাড়া দিয়েছে যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও বিলটি নিয়ে মুখ খুলতে হয়েছে। বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'কৃষি বিল নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে যে, সরকারি নূ্যনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) মিলবে না। ঐতিহাসিক এই বিল কৃষকদের রক্ষাকবচ।' মোদির এমন দাবির পর কংগ্রেসদলীয় সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম শনিবার প্রশ্ন তোলেন, 'কৃষকরা সরকারি মন্ডির বাইরে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে ফসল বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বা তার চেয়ে বেশি দরে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবেন, এমন কোনো শর্তের কথা বিলে নেই কেন?' এদিকে, ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ওঠা তিন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরালো করেছেন হরিয়ানার কৃষকরা। রাজ্যের সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে রাজ্য সরকার। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানসহ বিভিন্ন রাজ্যে এদিন সকাল থেকেই কৃষি সংস্কার বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন কৃষকরা। উত্তর ভারতের প্রভাবশালী কৃষক সংগঠন 'ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন' এদিন দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টার পথ অবরোধ আন্দোলন শুরু করে। তবে বিরোধিতা যত হোক, অঙ্কের হিসাবে রাজ্যসভায় সরকারপক্ষের জয় নিশ্চিত। কেননা ২৪৫ সদস্যের রাজ্যসভায় অন্তত ১৩০টি ভোট পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বিজেপি। এনডিএ জোটের শরিকরা ছাড়াও বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো দলগুলো বিলের পক্ষে ভোট দেবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।