ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের পাশে নেই নিরাপত্তা পরিষদের বেশির ভাগ দেশ

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও
যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ইরানের ওপর আবার জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ঘোষণা দিলেও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তার পরোয়া করছেন না। উলেস্নখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টিই জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাতিলযোগ্য। জাতিসংঘের মহাসচিবও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছেন। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, ডিপিএ, এপি, রয়টার্স ইরানকে 'শায়েস্তা করতে' ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক স্তরে যতই চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, সেই নীতি ততই বাধার মুখে পড়ছে। ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ত্যাগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এখন সেই চুক্তিকেই সম্বল করে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। রাশিয়া ও চীন তো বটেই, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো সহযোগী দেশও ওয়াশিংটনের চাপের সামনে নতি স্বীকার করতে নারাজ। তা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছে, শনিবার থেকে ইরানের ওপর 'স্ন্যাপব্যাক' (আগে যে সব নিষেধাজ্ঞা ছিল) নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলো। রোববার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, একতরফাভাবে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তাদের মতে, চুক্তি ত্যাগ করায় যুক্তরাষ্ট্র সেই আইনি ক্ষমতা হারিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধানের সঙ্গে মিলে তারা সরকারিভাবে এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ইইউ এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে মনে করিয়ে দিয়েছে, তারা পরমাণু চুক্তি অক্ষত রাখতে অক্লান্ত উদ্যোগ নিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই উদ্যোগ চালু রাখতে চায়। ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। পরমাণু চুক্তির যৌথ কমিশনের প্রধান হিসেবে তিনি এই চুক্তি অক্ষত রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার অঙ্গীকার করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, 'নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত না পেলে জাতিসংঘ ইরানের ওপর আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিরোধী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক প্রস্তাবের মাধ্যমে 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কিনা, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে গুতেরেস মন্তব্য করেছেন। উলেস্নখ্য, গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় আরোপের জন্য তিনি নিরাপত্তা পরিষদে ৩০ দিনের একটি প্রক্রিয়া চালু করবেন। এর ফলে আগামী ১৮ অক্টোবর তেহরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আর শেষ হতে পারবে না। এমন প্রেক্ষাপটে একমাত্র ইসরাইলের মতো হাতে গোনা কিছু দেশ ওয়াশিংটনের পাশে দাঁড়িয়েছে। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির উদ্দেশে বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোর এই জোরালো অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় আকারের কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখছে ইরান। সে দেশের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এমন দাবি করে বলেন, তার দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর লক্ষ্যে জোট গড়ে তোলার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি করার মার্কিন নীতির সামনে ইরান নতি স্বীকার করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রুহানি। তিনি পাল্টা জবাবেরও হুমকি দিয়েছেন। রোববার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে রুহানি বলেন, তেহরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে। এরপরও দেশটি কোনো হুমকি দিলে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট রুহানি তার ভাষণে বলেন, 'নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপের বেলায় যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত পরাজয়ের কাছাকাছি চলে গেছে... তারা পরাজয়ের মুখোমুখি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নেতিবাচক জবাব পেয়েছে।' আবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের ইচ্ছা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে নিষেধাজ্ঞার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার বিরোধিতা করা উচিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের। তা না হলে তারাও এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।