যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন-২০২০

নিজ ঘরেই আরও বিপাকে ট্রাম্প

ফের ট্রাম্পকে অভিশংসনের হুমকি ডেমোক্রেটদের সুপ্রিম কোর্টে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই একের পর এক চমক দেখা যাচ্ছে। এবার ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন খোদ রিপাবলিকান পার্টিরই অনেক সিনিয়র নেতা। যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্য ধরে রাখতেই তারা নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে সমর্থন দেবেন বলে জানিয়েছেন। এতে নিজ ঘরেই আরও বিপাকে পড়েছেন ট্রাম্প। সংবাদসূত্র : এএফপি, সিএনএন, আল-জাজিরা ওহিওর সাবেক গভর্নর এবং রিপাবলিকান পার্টির আজীবন সদস্য জন কাসিচ বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে এটা কখনোই হতো না। কিন্তু এখন স্বাভাবিক সময় নয়।' তিনি বলেন, 'ট্রাম্প জাতিকে বিভক্ত করছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে রিপাবলিকানদের উচিত জো বাইডেনকে নির্বাচনে সহযোগিতা করা।' নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস্টিন টড হোয়াইটম্যান, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনে সাবেক প্রার্থী মেগ হোয়াইটম্যান এবং নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সাবেক কংগ্রেস সদস্য সুসান মোলিনারিও একই মত ব্যক্ত করেছেন। সোমবার 'রিপাবলিকান ভোটার্স অ্যাগেইনস্ট ট্রাম্প' নামের একটি গ্রম্নপ ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকাকালীন কর্মকান্ডের পর্যালোচনা করেছে। এটি উপস্থাপন করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের আওতায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের কর্মকর্তা মাইলস টেইলর। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছেন। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে ট্রাম্পকে অভিশংসনের হুমকি করোনা মহামারিতে দুই লাখ মানুষের মৃতু্য। নাজুক অর্থনীতি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে নাগরিক আন্দোলন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী রাজনীতিতে এসব ইসু্য ছাপিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে প্রথম সরাসরি বিতর্কে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হতে শুরু করেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে আবার অভিশংসন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর কয়েক সপ্তাহ বাকি। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট ও ডাকযোগে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর দুই প্রার্থীর সরাসরি বিতর্কের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। এই বিতর্ক কতটা উত্তপ্ত হবে, রাজনীতির মাঠে তা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে অনুমান করতে প্রস্তুত নন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের জনসংযোগ পরিচালক টিম মুর্তোফ বলেন, নিঃসন্দেহে সরাসরি বিতর্কে বিচারপতি নিয়োগের ইসু্যটি সামনে চলে আসবে। গত সপ্তাহে বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের মৃতু্যর পর থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এই বিতর্কে এরই মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। শুরু থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টি ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের পর বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে। এ নিয়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন, কংগ্রেসের স্পিকার, সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা প্রতিদিনই বক্তব্য দিচ্ছেন। রুথ গিন্সবার্গের মৃতু্য ট্রাম্পকে নতুন বিষয় নিয়ে বিতর্কের সুযোগ করে দিয়েছে। এই বিতর্কে তার অবস্থান সুবিধাজনক স্থানে। সংবিধান তার পক্ষেই রয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে জনগোষ্ঠীকে উদ্দীপ্ত করে তার রাজনীতি, সেই রক্ষণশীল গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার অমোঘ হাতিয়ার এখন ট্রাম্পের কাছে। অন্যদিকে, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নতুন করে হুমকি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টি নির্বাচনের আগেই বিচারপতি নিয়োগের উদ্যোগ নিলে তাদের কাছে তা মোকাবিলার অস্ত্র আছে। 'এবিসি' টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, 'কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তারা দেশের গণতন্ত্র ও মূল্যবোধ রক্ষায় যেকোনো রাজনৈতিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত আছেন। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা অ্যাটর্নি জেনারেল উলিয়াম বারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে অভিশংসন প্রস্তাব নেওয়া হতে পারে।' এমন প্রস্তাব আনা হলে সিনেটে ইমপিচমেন্টের বিচারপ্রক্রিয়া উন্মুক্ত করতে হবে। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগে ট্রাম্পের উদ্যোগকে বিলম্ব করার প্রয়াস নিতে পারে ডেমোক্রেটিক পার্টি। সুপ্রিম কোর্টে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট এদিকে, উদারপন্থি বিচারপতি রুথ বেডার গিন্সবার্গের মৃতু্যর পর মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে তার উত্তরসূরি নিয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। জানা গেছে, এই নিয়োগ বিলম্ব করতে চান না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র দেড় মাস। অর্থাৎ বিচারপতি নিয়োগের স্বাভাবিক সময়ও হাতে নেই। তারপরও তাড়াহুড়া করে হলেও নিজপক্ষের কোনো বিচারপতিকে গিন্সবার্গের জায়গায় বসাতে চাইছেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহেই নিজের মনোনীত বিচারপতির নাম ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।