সংঘর্ষে বহু হতাহত

দোহায় শান্তি আলোচনার মধ্যেই অশান্তি আফগানিস্তানে

দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন শক্তি প্রদর্শন ও চাপ দেওয়ার জন্যই সংঘর্ষ হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুদ্ধকবলিত আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে কাতারের রাজধানী দোহায় গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা। এই আলোচনা শুরুর পর থেকেই দুই পক্ষের একের পর এক সংঘাতে আরও নাজুক পরিস্থিতি দেশটিতে। আফগানিস্তানজুড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের কয়েকটি লড়াইয়ের ঘটনায় অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছে। রোববার রাতভর চলা এই সংঘর্ষের ঘটনায় আরও বহু লোক আহত হয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, এএফপি গত ১২ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান প্রতিনিধিদের শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন ছিল এটি। দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হওয়ার পরও অগ্রগতি সামান্য, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে। অনেক দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তালেবান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রোববার রাতে সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে মধ্যাঞ্চলীয় উরুজগান প্রদেশে। সেখানে তালেবান যোদ্ধারা নিরাপত্তাবাহিনীর চেকপয়েন্টগুলোতে হামলা চালিয়ে বাহিনীর ২৪ সদস্যকে হত্যা করেছে বলে প্রদেশটির ডেপুটি গভর্নর সৈয়দ মোহাম্মদ সাদাত জানিয়েছেন। তাখার, হেলমান্দ, কাপিসা, বলখ, মাইদান ওয়ারদাক ও কুন্দুজেও সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রদেশগুলোর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বলখে আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা 'ন্যাশনাল ডিরেক্টর অব সিকিউরিটি'র তিন সদস্যকে তালেবান জিম্মি করেছে বলে প্রদেশটির গভর্নরের মুখপাত্র মনির আহমদ ফরহাদ জানিয়েছেন। এদিকে, তালেবান তাদের পক্ষে হতাহতের কথা নিশ্চিত না করলেও পামির মিলিটারি কোরের মুখপাত্র আবদুল হাদি জামাল জানিয়েছেন, রোববার রাতে কুন্দুজ, তাখার ও বাঘলান প্রদেশে সংঘর্ষে ৫৪ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। এছাড়া সেনা ও সরকারি মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, সবমিলিয়ে অন্ততপক্ষে ৮০ জন তালেবান মারা গেছে। এর মধ্যে কুন্দুজ, তাখার, বাঘলান প্রদেশে ৫৪ জন মারা গেছে। শুধু সেনা বা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরাই নয়, তালেবানের হামলায় বহু সাধারণ মানুষ মারা গেছে বলে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন। তার হিসাবে, গত দুই সপ্তাহে তালেবানের হামলায় দেশটির ২৪টি প্রদেশে ৯৮ জন সাধারণ মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় ২৫০ জন। কিন্তু কাতারে সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলার মধ্যেই এই ধরনের রক্তাক্ত সংঘর্ষ কেন? আসলে দুই পক্ষ নিয়মিত আলোচনা করলেও তা খুব বেশি এগোয়নি। এখনো তারা বিরোধের মূল বিষয়গুলোতেই ঢুকতে পারেনি। কথা হচ্ছে পদ্ধতিগত নিয়ম-কানুন নিয়ে। এই অবস্থায় শক্তিপ্রদর্শন ও চাপ দেয়ার জন্যই আফগানিস্তানজুড়ে সংঘর্ষ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উলেস্নখ্য, দীর্ঘ আফগান যুদ্ধ অবসানে দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় গত ফেব্রম্নয়ারিতে ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছায় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র। ওই সমঝোতায় বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রম্নতি দেয় মার্কিন হামলায় ১৯ বছর আগে দেশটির ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া গোষ্ঠীটি। এছাড়া সমঝোতায় আফগান সরকারের সঙ্গেও তাদের আলোচনায় বসতে বলা হয়।