পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও আর জামাির্নতে ফেরা নয়

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইয়াজিদি তরুণী আসওয়াক
ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। কিছুদিন যৌন দাসত্বের শিকার হয়ে পালিয়ে বঁাচল সে। পরে পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নেয় জামাির্নতে। সেই জামাির্নতেই সে এমন একজনের সাক্ষাৎ পেল, যা তাকে রীতিমতো ভয়াতর্ করে তুলেছে। কারণ আইএসের হাতে থাকার সময় ওই ব্যক্তির কাছেই বন্দি ছিল সে। উত্তর ইরাক ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মূলকেন্দ্র। আইএস যখন আগ্রাসন শুরু করে, তখন আসওয়াকের বয়স মোটে ১৪ বছর। তারা আসওয়াকসহ হাজার হাজার নারীকে তুলে নেয় যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের জন্য। পরে আবু হুমাম নামের এক ব্যক্তির কাছে তাকে বিক্রি করা হয় মাত্র ১০০ ডলারে। সেখানে কয়েক মাস ধষর্ণ ও মারধরের শিকার হয় সে। প্রায় তিন মাস আটক থাকার পর একপযাের্য় পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং এরপরই মা ও এক ভাইয়ের সঙ্গে জামাির্নতে পাড়ি জমায়। সেখানে ভালোই চলছিল। হঠাৎ করেই একদিন একটি সুপারমাকেের্টর বাইরের রাস্তায় সে শুনতে পায়, কেউ একজন তার নাম ধরে ডাকছে। আসওয়াক জানায়, ‘স্কুল থেকে ফেরার পথে একটি গাড়ি আমার কাছে দঁাড়ায়। লোকটি সামনের আসনেই বসে ছিল। সে জামার্ন ভাষায় আমাকে জিজ্ঞাসা করেÑ তুমি আসওয়াক? আমি ভয় পাচ্ছিলাম। বললামÑ না, কিন্তু আপনি কে?’ আসওয়াকের ভাষায়, ‘লোকটি বলে, আমি জানি তুমি আসওয়াক এবং আমি আবু হুমাম। এরপরই সে আরবিতে কথা বলতে শুরু করে ও তার সঙ্গে মিথ্যা না বলতে বলে। সে বলে, আমি তোমাকে চিনি। এবং জানি কোথায় ও কাদের সঙ্গে তুমি বাস করছ। সে জামাির্নতে আমার জীবন সম্পকের্ সব কিছুই জানে।’ কখনোই ভাবতে পারেনি জামাির্নতেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে সে। আসওয়াক জানায়, ‘আমি পরিবার ও দেশ ছেড়ে জামাির্নতে গিয়েছিলাম সব কষ্ট ভুলতে। কিন্তু আমাকে যে জিম্মি করে রেখেছিল সে, এখন আমার সবকিছুই জেনে গেছে।’ জামাির্নর ফেডারেল প্রসিকিউটর বলেন, আসওয়াক পরে পুলিশকে জানায় ঘটনাটি। তবে ঘটনার পঁাচ দিন পর। কমর্কতার্রা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে খুঁজছেন এবং আসওয়াককে বলা হয়েছে, আবু হুমামকে আবার দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে। ওই ঘটনায় ভয় পেয়ে ও সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া তার আরও চার বোনের সঙ্গে মিলিত হতে আবার উত্তর ইরাকে ফিরে গেছে আসওয়াক। তার মতে, ‘একটি মেয়ে আইএসের হাতে ধষির্ত হলো। কিন্তু যখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে আপনার আবার দেখা হয়ে যায়, তখন পরিস্থিতি কী হয়, সেটি আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।’ ইরাকের কুদির্স্তানে ইয়াজিদি ক্যাম্পে এখন বাস করছে আসওয়াক। সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায় এবং তার পরিবারও দেশ ছাড়তে চায়। কিন্তু জামাির্নর অভিজ্ঞতা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে আসওয়াকের মনে। সে জানায়, ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও আমি আর জামাির্নতে ফিরব না।’ আরও অনেক নিযাির্তত ইয়াজিদি তরুণীর মতো আসওয়াকের পরিবারও একটি বিশেষ কমর্সূচির আওতায় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছে। এখন প্রতীক্ষা ভালো সংবাদের। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ