দিশেহারা বিশ্ব

করোনা মহামারি নিয়ে উত্তপ্ত নিরাপত্তা পরিষদ

বৈশ্বিক ঐক্যের অভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে মহামারি মন্তব্য গুতেরেসের

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাসে দিশেহারা বিশ্বের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও। বৃহস্পতিবার করোনা ইসু্যতে পরিষদের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার কথা তুলে ধরার পর যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। সংবাদসূত্র :আল-জাজিরা, এএফপি মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, 'বৈশ্বিক প্রস্তুতি, সহযোগিতা, ঐক্য ও সংহতির অভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি মানুষের মৃতু্য হয়েছে।' ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গুতেরেস আরও বলেন, 'মহামারি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরীক্ষা। যে পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। জলবায়ু সংকটও যদি একইভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে আমার আশঙ্কা- পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।' গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বে করোনা 'পেস্নগ' ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দুই লাখের বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে মহামারির অবনতির জন্য বেইজিংকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকে মার্কিন দূত কেলি ক্রাফটের এই অভিযোগ পুনরায় তুলে ধরলে তা খারিজ করে চীনা দূত ঝ্যাং জুন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, 'যথেষ্ট হয়েছে। আপনারা এরই মধ্যে বিশ্বের জন্য অনেক সংকট তৈরি করেছেন।' চীনা দূত আরও বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মেডিকেল টেকনোলজি এবং ব্যবস্থা থাকার পরও কেন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতু্য ঘটছে? যদি কাউকে দায়ী করতেই হয়, তাহলে তা কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিককে করতে হবে। রাশিয়ার দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা করোনাকালে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারি পরিস্থিতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিকে ওয়াশিংটনের প্রথাগত নেতৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের দূতদের সমালোচনা করেন মার্কিন দূত ক্রাফট। তিনি বলেন, 'আপনাদের সবার লজ্জা হওয়া উচিত। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আমি হতবাক ও মেনে নিতে পারছি না। এই পরিষদ নিয়ে সত্যিই আমি লজ্জিত। এই পরিষদের সদস্যরা চলমান সংকট নিয়ে কথা বলার চাইতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।' কূটনীতিকরা জানান, মার্কিন দূতের কথা বলার ভঙ্গিতে তারা ধাঁধায় পড়ে যান। চীনা দূত কথা বলার আগেই ক্রাফট বৈঠক ছেড়ে চলে যান। এক কূটনীতিক বলেন, মোটামুটি একটি ঐকমত্যের অধিবেশন শেষে ক্রাফট ছিলেন খুবই আক্রমণাত্মক। জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন দূত ন্যান্সি সোডারবার্গ বলেন, বিশ্বের মূল কেন্দ্র এই সংস্থা। নিরাপত্তা পরিষদের এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে, করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক ব্যবস্থা কতটা ভেঙে পড়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কোনো নাম উলেস্নখ না করেই বলেন, মহামারি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন গভীর করেছে। তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশ নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থের জন্য চলমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছে।'