মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ

রুশ-মার্কিন চুক্তির প্রস্তাব পুতিনের

দুই দেশের যোগাযোগ লাইন আবারও চালুর আহ্বান ডাকযোগের ভোট নিয়ে চরম অস্বস্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি করে একে অপরের নির্বাচনে সাইবার হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার এক বিবৃতিতে দুই দেশের মধ্যে আবার সবকিছু ঠিকঠাক করে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা পুতিন বলেন, 'তথ্য ও প্রযুক্তি কিংবা উচ্চ-প্রযুক্তি পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াসহ একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর পারস্পরিক নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাব করছি আমি।' চুক্তির প্রস্তাব ছাড়াও দুই দেশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যকার যোগাযোগ লাইন আবার পুরোদমে চালু করারও আহ্বান জানিয়েছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনের এই সময়ে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, রাশিয়া ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্পকে মসনদে বসতে সাহায্য করেছে। ওই নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনের প্রচারাভিযানেও রাশিয়া হ্যাকিং করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে মস্কো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বর্তমানে আবার নির্বাচনে জয়লাভের চেষ্টায় প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন। এর মধ্যেই ক্রেমলিন থেকে দেওয়া বিবৃতিতে পুতিন বলেন, 'আমাদের এই সময়ে প্রধান একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ডিজিটাল জগতে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি মোকাবিলা করা। তথ্য এবং প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ককে আবার ঠিক করে নিতে বাস্তবিক নানা পদক্ষেপের একটি বিস্তৃত কর্মসূচি অনুমোদনের জন্য আমি আরও একবার যুক্তরাষ্ট্রকে আবেদন জানাচ্ছি।' বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঠেকাতে দুই দেশের একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রস্তাব দিয়ে পুতিন একে তুলনা করেছেন সেই ১৯৭২ সালের যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত চুক্তির সঙ্গে। স্নায়ুযুদ্ধের তুমুল উত্তেজনার ওই সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই চুক্তিটি হয়েছিল। ডাকযোগের ভোট নিয়ে চরম অস্বস্তিতে ট্রাম্প এদিকে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডাকযোগে ভোট দেওয়া নিয়ে আবারও নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার ভার্জিনিয়ার নিউপোর্টে এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেন, 'নভেম্বরে ভোটের পর জয়ী কে তা জানতে হয়তো কয়েক মাস লেগে যাবে।' এদিকে, দেশটির নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ডাকযোগের ভোট নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন ট্রাম্প। তাই একের পর এক প্রলাপ বকছেন তিনি। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হবে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার দেশটির অর্ধেক ভোটারই ডাকযোগে ভোট দেবেন। তবে শুরু থেকেই ডাকযোগে ভোটের ঘোর বিরোধী ট্রাম্প। এদিকে, ট্রাম্পের মতো কয়েক মাস না বললেও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ভোটের ফল জানতে বেশ কয়েকদিন লেগে যাবে। কারণ, যারা ডাকযোগে ভোট দেবেন তাদের ব্যালট নানা কারণে ৩ নভেম্বরের পরও নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাবে। ফলে কর্মকর্তাদের ভোট গুণে শেষ করতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ডাকযোগে ভোটের ব্যালট পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করার চাইতে তিনি বরং জয় বা পরাজয়ের বিষয়টি দ্রম্নত নিশ্চিত হতে পারলে খুশি হবেন।' তিনি বলেন, আমি বরং টেলিভিশনে দেখতে চাই বলা হচ্ছে 'বিজয়ী হয়েছেন অমুক। এটা শোনার জন্য আপনি নিশ্চয়ই কয়েক মাস অপেক্ষা করতে পারেন না, কারণ সেটা হবে জগাখিচুড়ি অবস্থা।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, 'ভোটের রাতেই আপনি বিজয়ীর নাম শুনতে পাবেন, এবার এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হয়তো আমি এগিয়ে থাকব এবং তখনও তারা একটার পর একটা ব্যালট পাবে, ব্যালট আসতে থাকবে, আসতেই থাকবে। তখন তারা বলবে, আরও পরেও ব্যালট আসতে পারে।' মিশিগান, পেনিসিলভেনিয়া, উইসকনসিন এবং নর্থ ক্যালোরাইনার মত যেসব অঙ্গরাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে সেখানে এমনকি ভোটের দিনও ভোটাররা নিজেদের পছন্দ জানিয়ে ডাকযোগে ব্যালট পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিভাবেই তাদের ব্যালট নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে ৩ নভেম্বর পেরিয়ে যাবে। ওইসব ভোট গণনায় নিশ্চিত করতে এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত একটি নির্দেশ জারি করেছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক ভোটাররা মহামারির মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ভিড় এড়াতে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা বেশি করেছে।