সতর্কবার্তা ডবিস্নউএইচওর

কার্যকর টিকার আগেই মৃতু্য ২০ লাখ ছাড়াতে পারে

সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে ৫৫ দিন পর ইরানে রেকর্ড দুই শতাধিক মৃতু্য

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জরুরি কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রায়ান
করোনাভাইরাস মহামারির কার্যকর একটি টিকা সহজলভ্য হওয়ার আগেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতু্য ২০ লাখ ছাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। সংস্থার জরুরি কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেন, সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে মৃতু্যর এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর শনিবার পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ৯ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সংক্রমণ ও মৃতু্যর বর্তমান যে গতি, তাতে কয়েকদিনের মধ্যেই এ সংখ্যা ১০ লাখ অতিক্রম করবে। এখন উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের নতুন ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই 'দ্বিতীয় ঢেউয়ের' তীব্রতাও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এখন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে যে তিন কোটি ২৮ লাখের বেশি শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগী মিলেছে, তার প্রায় অর্ধেকই এই তিন দেশের। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউরোপজুড়ে সংক্রমণের পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহামারির 'প্রথম ঢেউয়ের' মতো এবারও বিভিন্ন দেশ লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। ইউরোপে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে ড. রায়ান বলেন, 'সব মিলিয়ে বেশ বড় অঞ্চলজুড়েই কোভিড-১৯ রোগের উদ্বেগজনক উত্থান দেখতে পাচ্ছি।' কার্যকর একটি টিকা সহজলভ্য হওয়ার আগে কোভিড-১৯ এ মৃতু্য ২০ লাখের ঘর ছুঁতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ কর্মকর্তা টিকা পাওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে এ পরিমাণ মানুষের মৃতু্য 'অসম্ভব নয়' বলে মন্তব্য করেন। কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার যত উন্নতি হবে, মৃতু্যর হার তত কমে আসবে বলেও আশাবাদ তার। এদিন পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে ড. রায়ান বলেন, 'উন্নত চিকিৎসা, এমনকি কার্যকর একটি টিকাও মৃতু্য ২০ লাখের ঘর ছাড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এ সংখ্যা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি নিয়েছি আমরা?' কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি তিনি আহ্বানও জানিয়েছেন। ডবিস্নউএইচওর জরুরি কর্মসূচির প্রধান বলেন, 'আমরা যদি তা না করি, তাহলে আপনারা যে সংখ্যার কথা বলছেন, তা সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনকভাবে বলতেই হচ্ছে, এমনটা হতে পারে।' ৫৫ দিন পর ইরানে রেকর্ড দুই শতাধিক মৃতু্য এদিকে, প্রায় ৫৫ দিন পর ইরানে মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে একদিনে রেকর্ড ২০৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে দেশটিতে সর্বশেষ গত ১ আগস্ট ২১৬ জনের প্রাণ কাড়ে করোনা। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সীমা সাদাত লারি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে করোনায় নতুন মারা গেছে ২০৭ জন। মোট মৃতু্য বেড়ে ২৫ হাজার ২২২ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া নতুন রোগী শনাক্তের হারও আগের চেয়ে বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃতু্যর নতুন রেকর্ড গত ১ আগস্টের পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন ইরানি ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইরানে একদিনে নতুন করে আরও তিন হাজার ৫৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মহামারিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইরানে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছে চার লাখ ৩৯ হাজার ৮৮২ জন। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। উলেস্নখ্য, বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া কোনো দেশ ভ্যাকসিন আনতে পারেনি। রাশিয়ার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও এখনো সেটি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প চলমান রয়েছে। এদিকে, গত সাতদিনে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ২২ লাখ বেড়ে বিশ্বে সংক্রমণ তিন কোটি ২৬ লাখ ছাড়িয়েছে। এই সংক্রমণের হার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.৪ শতাংশ। সংক্রমিতদের মধ্যে গুরুতর রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, গত এক সপ্তাহে যা প্রায় পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। এই রোগীর সংখ্যা সংক্রমিতদের সার্বিক হিসাবের ২৩.৩ শতাংশ। করোনামুক্ত হওয়ার হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে, গত সাত দিনে এই হার ৬৮ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৬৯ শতাংশ হয়েছে। এ সময়ে মোট করোনামুক্ত হয়েছে ১৭ লাখ রোগী। গত সাত দিনে কোভিড-১৯-এ প্রায় ৩৭ হাজার লোকের মৃতু্য হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মোট ৯ লাখ ৮৩ হাজার লোকের মৃতু্য হয়েছে। মৃতু্যর হার কমে তিন শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আপেক্ষিক বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। কিন্তু গত সাত দিনে সংক্রমণ বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ, পূর্ববর্তী সপ্তাহে এই হার ছিল ৭.৪ শতাংশ। তবে কিছু দেশে করোনা দ্রম্নত ছড়াচ্ছে। এ সময়ে চেক রিপাবলিকে সংক্রমণ ৩২ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ হাজার। কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ইসরাইলেও গত সাত দিনে সংক্রমণ বেড়েছে, এ সময় নিবন্ধিত আক্রান্তের সংখ্যা ২১ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির সরকার নতুন করে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরাইলে দুই লাখ ১২ লোক আক্রান্ত, যা মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ। আর্জেন্টিনায় গত এক সপ্তাহে ৭৭ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৭৮ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপে ইউরোপ মহাদেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রান্সে এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ২০ শতাংশ। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভর্তি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ বেড়েছে ৯.১ শতাংশ, আগের সপ্তাহে সংক্রমণের হার ছিল ৬.৬ শতাংশ।