ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কেবল ক্ষতিই করছে, মন্তব্য ইইউ কর্মকর্তার

ট্রাম্পের কারণে ইউরোপে মিত্র হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) যে পছন্দ করেন না, সেটা গোপন কিছু নয়। গত চার বছর ধরে তিনি সবসময়ই যুক্তরাজ্যের হয়ে ব্রেক্সিটের পক্ষে সরব ছিলেন। এছাড়া ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইইউ গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফায়দা নেওয়ার জন্যই। সুতরাং ইউরোপীয় দেশগুলোতে ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রদূতরা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে কিছু করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর এসব কারণেই ইইউতে মিত্রহারা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা চলতি সপ্তাহেই দেখা গেছে, নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিট হোকস্ট্রা দূতাবাসের মধ্যেই 'ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি' (এফভিডি) নামে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র ডানপন্থী, অভিবাসন ও ইইউ-বিরোধী দলটি নেদারল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি ডাচ সাময়িকী দাবি করেছে, এফভিডির জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশেই মূলত মার্কিন দূতাবাসে ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, নেদারল্যান্ডে ওই অনুষ্ঠানটি ছিল টাউন হল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর সভা। তাদের দাবি, হোকস্ট্রা আগেও আটটি ভিন্ন দলের সঙ্গে এ ধরনের ১৫টি টাউন হল সভার আয়োজন করেছেন। অর্থাৎ এফভিডির সঙ্গে অনুষ্ঠান তাদের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মার্কিন প্রশাসনের এ দাবির সঙ্গে একমত নন অনেকেই। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য এবং স্ট্যানফোর্ড সাইবার পলিসি সেন্টারের আন্তর্জাতিক নীতি বিয়ষক পরিচালক মারিয়েতে শাকে বলেন, 'তহবিল সংগ্রহ হোক বা না হোক, একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান আয়োজনকে আপনি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখতে পারেন। সাধারণত, কূটনীতি হচ্ছে সরকারের সঙ্গে সরকারের মিথস্ক্রিয়া, নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার এবং রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার ধারণা দেওয়া নয়।' তিনি বলেন, 'ট্রাম্প প্রশাসন আগেও দেখিয়েছে, আবারও দেখাচ্ছে, তাদের মিত্ররা নাইজেল ফারাজ (ব্রেক্সিটপন্থী ব্রিটিশ রাজনীতিক) ও এফভিডির মতো ইউরোপীয় শক্তির বিরোধী।' যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত উডি জনসনের নামেও রয়েছে অভিযোগ। তিনি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাম্পের মালিকানাধীন কোনো একটি কোর্টে ব্রিটিশ ওপেন গলফ টুর্নামেন্ট আয়োজনের চেষ্টা করেছেন। এমন অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষ প্রমাণের আগেই এ প্রচেষ্টার কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন জনসন। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ রাষ্ট্রদূতকে কখনোই এমন কিছু করার জন্য বলেননি। এছাড়া যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত সরাসরি ব্রেক্সিটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে জার্মানিতেও। সেখানকার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড গ্রেনেল এমন কাজ করেছেন যা সাধারণত কূটনীতিকদের করা মানায় না। যেমন- তিনি টুইট করেছেন, 'ইরানে ব্যবসা করা জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া।' এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কি আর আছে? ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কেবল ক্ষতিই করছে।' তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, 'যৌথ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কখনো পরামর্শ করে না।'