দাবি বিজ্ঞানীদের

আমাদের ছায়াপথেই ৩৬টি ভিনগ্রহী সভ্যতা!

তাদের সভ্যতা আমাদের মতোই উন্নত হতে পারে। এমনকি আমাদের চেয়েও উন্নততর হতে পারে

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমাদের মতো সভ্যতা আরও অনেকগুলো রয়েছে এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই বা ছায়াপথেই। যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি। তারাও পারে। ভিনগ্রহীদের সেই সভ্যতাগুলোর সংখ্যা কম করে ৩৬। সেই ভিনগ্রহীরা বেশ বুদ্ধিমান। সেই সব সভ্যতাও বেশ উন্নত। আর আমাদের পাঠানো সংকেতের জবাব সেই ভিনগ্রহীদের কাছ থেকে পেতে গেলে মানবসভ্যতাকে আরও অন্তত ছয় হাজার ১২০ বছর টিকে থাকতে হবে। এমনটাই দাবি করেছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল 'দি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল'-এ। গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই ভিনগ্রহীদের খোঁজ-তলস্নাশ শুরু করেছে মানবসভ্যতা। কিন্তু এই প্রথম কোনো গবেষণা হিসাব দিল, এই ব্রহ্মান্ডে আমাদের 'নাগালের মধ্যে' ভিনগ্রহীদের অন্তত কয়েকটি সভ্যতা থাকতে পারে। যেগুলোর সঙ্গে দূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে আমাদের। সেই ভিনগ্রহীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরে ব্রহ্মান্ডের অন্য কোথাও অন্য কোনোখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব কি না- দীর্ঘদিনের এসব প্রশ্নের একটা দিশা মিলল এই গবেষণায়। সহযোগী গবেষক যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কনসেলিস বলেছেন, 'ব্রহ্মান্ডে আমাদের ছাড়াও বুদ্ধিমান প্রাণীর উন্নত সভ্যতা আর কয়েকটি রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে? তুলতে পারি, এই প্রথম তার একটা আন্দাজ পাওয়া গেল। যা আমাদের সভ্যতার কয়েক হাজার বছরের প্রশ্ন ছিল আর যে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর এর আগে মেলেনি। এ জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।' ১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন বিখ্যাত সমীকরণ 'ড্রেক ইকু্যয়েশন'। এই সমীকরণের সমাধানের জন্য সাতটি মাত্রা বেছে নিয়েছিলেন ড্রেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কোনো গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে বছরে গড়ে কতগুলো নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে, কোন্‌ সময়সীমার মধ্যে ভিনগ্রহীদের পাঠানো সংকেত আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে পারে। তবে ড্রেক ইকু্যয়েশনের সমস্যা ছিল, তার সমাধানের ফলের ব্যাপকতা। অনিশ্চয়তা। ওই সমীকরণ অনুযায়ী, ভিনগ্রহীদের কোনো সভ্যতা যেমন নাও থাকতে পারে, তেমনই অমন সভ্যতার সংখ্যা কয়েকশ কোটিও হতে পারে। কনসেলিস বলেন, 'ফলে ভিনগ্রহীদের সভ্যতা নিয়ে আমাদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া ড্রেক ইকু্যয়েশন দিয়ে আর তেমন কোনো সমস্যার জট খুলছিল না। তাই আমরা ওই সমীকরণটির পরিমার্জন, পরিবর্ধন করেছি।' আর সেটা করতে গিয়েই গবেষকরা দেখেছেন, এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই পৃথিবীর মতো অন্যান্য গ্রহে অস্তিত্ব রয়েছে বুদ্ধিমান প্রাণীর। তাদের সভ্যতা আমাদের মতোই উন্নত হতে পারে। এমনকি, আমাদের চেয়েও উন্নততর হতে পারে। বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্ম ও বিকাশের প্রক্রিয়া যদি বিজ্ঞানসম্মত হয়, তা যদি আমাদের জানা বিজ্ঞানের নিয়মগুলো মেনে চলে, তাদের যদি অন্য কোনো নিয়মে আলটপকা উদ্ভব না হয়, তা হলে ভিনগ্রহীদের আরও অনেক সভ্যতা রয়েছে। সেই ভিনগ্রহীদের চেহারাও আমাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো নয়। বরং পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তনের নিয়ম মেনে চললে তারাও অনেকটা আমাদেরই মতো দেখতে। গবেষকদের দেওয়া হিসাব, এসব নিয়ম মেনে চললে এই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই এমন চারটি থেকে ২১১টি সভ্যতা রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি। তারাও পারে। খুব কম হলেও সেই সংখ্যাটা ৩৬। আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকা এমন সভ্যতাটি কী হতে পারে, তারও হিসাব দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, 'বুদ্ধিমান ভিনগ্রহীদের এমন উন্নত সভ্যতা আমাদের থেকে কম করে ১৭ হাজার আলোকবর্ষ (এক বছরে শূন্য স্থানে আলো যে পথ অতিক্রম করে) দূরেই রয়েছে।' সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ