লাদাখে ফের উত্তেজনা

ট্যাংক-সাঁজোয়া যান নিয়ে মুখোমুখি ভারত-চীন

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিতর্কিত লাদাখ সীমান্তে পারমাণবিক শক্তিধর চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সামরিক বাহিনীর মাঝে কয়েক মাস ধরে নজিরবিহীন উত্তেজনা চলছে। কূটনৈতিক, সামরিক ও সরকারি পর্যায়ে লাদাখের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে উভয় দেশ দফায় দফায় আলোচনায় সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং উভয় দেশের সেনারা বিতর্কিত এই সীমান্তে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ ভারতীয় সেনাবাহিনী রোববার লাদাখে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান মোতায়েনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনাদের লক্ষ্য করে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভূপৃষ্ঠ থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার সীমান্ত লাদাখের চুমার-দেমচক এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সারি সারি টি-৯০ ট্যাংক ও বিএমপি সাঁজোয়া যান চীনা ভূখন্ডের দিকে তাক করে আছে। অন্যদিকে, চীনা বাহিনীও ভারতীর অংশের দিকে তাক করে বিপুল অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট দুই দেশের সেনাবাহিনীর মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই দিন লাদাখের প্যাংগং লেকের দক্ষিণ তীরে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে চীনা সেনারা। তখন থেকেই উভয় দেশ সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক দফা বৈঠক করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। গত ২৯ ও ৩০ আগস্ট রাতে চীনের 'পিপলস লিবারেশন আর্মি' তাদের ট্যাংক এবং সেনা সরিয়ে নেয়। যদিও দুই দেশের দ্বিপাক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, রাতের বেলা সীমান্তে যেকোনো ধরনের সেনা সমাবেশ এবং সামরিক যান চলাচল নিষিদ্ধ। পরদিন প্যাংগং লেকের একই এলাকায় আরও সেনা সমাবেশ ঘটায় চীন। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ট্যাংক ও অন্যান্য যুদ্ধযান, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বসবাসের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত কাঠামোসহ যাবতীয় সরঞ্জামে সম্পূর্ণ বাহিনীকে সেনাবাহিনীর পরিভাষায় বলা হয় 'মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি' বা সংগঠিত পদাতিক বাহিনী। পূর্ব লাদাখের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিস্তৃত সিন্ধু নদের ধার বরাবর নদী পার হওয়া, যেকোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করাসহ মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি পূর্ণ রেজিমেন্টের এই প্রদর্শন ও মহড়া চলছে। পূর্ব লাদাখে ভারত-চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধের পুরো প্রস্তুতির দায়িত্বভার রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কোর'-এর ওপর। এই বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা মেজর জেনারেল অরবিন্দ কাপুর দাবি করে বলেন, 'শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীতে একমাত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কোর' এ রকম চরম প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করেও যুদ্ধ করতে সক্ষম। এই সব ট্যাংক, যুদ্ধযান ও অস্ত্রশস্ত্রগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা এখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ। অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা দুই তরফেই পর্যাপ্ত রয়েছে।' এদিকে, হিমালয় বেষ্টিত লাদাখে চীনের পাশাপাশি তীব্র ঠান্ডা মোকাবিলাতেও প্রস্তুত হচ্ছে ভারতীয় বাহিনী। প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও যুদ্ধ করতে সমান পারদর্শী এমন যুদ্ধযান মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মহড়া। শীতের মৌসুমে মাইনাস ২০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায় পূর্ব লাদাখের তাপমাত্রা। প্রতি বছরই শীত আসার আগে তার জন্য প্রস্তুতি চলে সেনাবাহিনীতে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। মে মাস থেকে প্যাংগং লেক, গালওয়ান উপত্যকাসহ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। তার জেরে ১৫ জুন গালওয়ানে ঘটে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এদিকে, ভারতের সেনা সূত্রে জানা গেছে, তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও বসবাসের উপযোগী অস্থায়ী বাসস্থান তৈরিতেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। আনা হয়েছে আগে থেকে তৈরি করে রাখা কাঠামো, যা খুব কম পরিমাণ সিমেন্ট বালি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে।