নিউইয়র্ক টাইমসের বোমা

ট্রাম্প আয়কর দেননি ১০ বছর

দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রথম বিতর্ক আজ, গুরুত্ব পাচ্ছে বিচারক নিয়োগ, স্বাস্থ্য ও বর্ণবৈষম্য দ্বিতীয় বিতর্ক মিয়ামিতে ১৫ অক্টোবর। শেষ বিতর্ক ২২ অক্টোবর নাশভ্যালিতে

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের মুখেই বোমা ফাটাল 'নিউইয়র্ক টাইমস' পত্রিকা। পত্রিকাটি জানিয়েছে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছেন। আর গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর আয়করই দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার প্রথম 'প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে' (বিতর্ক) ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের মুখোমুখি হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরই মধ্যেই তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির এই অভিযোগ সামনে এলো। সংবাদসূত্র : ডিপিএ, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এএফপি নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ২০১৬ সালে যে বছর তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ভোটে লড়েন এবং তারপরের বছর তিনি মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছেন। পত্রিকাটির দাবি, তাদের কাছে সব নথিপত্র রয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প কর দেননি। এদিকে, ট্রাম্প এই খবরকে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি আসলে আয়কর দিয়েছি। সেটা নিয়ে অডিট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে অডিট হয়েই চলেছে।' সব দোষ কর কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, 'কর কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করছে।' ১৯৭০ সালের পর থেকে তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি আয়করের রিটার্ন প্রকাশ করেননি। এটা অবশ্য আইন অনুযায়ী তিনি করতে বাধ্য, এমন নয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা স্বচ্ছতার জন্য নিজের আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করে থাকেন। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টও বলছে, ট্রাম্পের সঙ্গে 'ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস'র এক দশক ধরে বিরোধ চলছে। ট্রাম্প তার বিশাল ক্ষতি দেখিয়ে সাত কোটি ২৯ লাখ ডলারের 'ট্যাক্স রিফান্ড' দাবি করেছেন। বিরোধ সেটা নিয়েই। সংবাদপত্রটির দাবি, ট্রাম্প ও তার কোম্পানিগুলোর গত দুই দশকের আয়কর রিটার্নের তথ্য তাদের হাতে এসেছে। এই নথি খতিয়ে দেখে তাদের মনে হয়েছে, এ নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। রিপোর্ট বলছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই বিপুল ক্ষতির কথা জানিয়ে ট্রাম্প কোনো আয়কর দেননি। আর যে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছিলেন। অথচ, তিনি প্রচুর সম্পত্তি ও ব্যবসার মালিক। ট্রাম্পের দাবি, তার গল্ফ কোর্স, হোটেলগুলোতে বছরের পর বছর কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। মিয়ামিতে তার সব চেয়ে বড় গল্ফ কোর্স রিসর্টে ২০১৮ সালে ১৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে তার দাবি। তাছাড়া স্কটল্যান্ডে দুটি এবং আয়ারল্যান্ডে একটি গল্ফ রিসর্টে ছয় কোটি ৩৩ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আগামী চার বছরে তাকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ ও অন্য পাওনা মেটাতে হবে। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রথম বিতর্ক আজ এতদিন বিভিন্ন সমাবেশে একে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকলেও আজ মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন প্রথম সরাসরি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। তিন দফা বিতর্ক দেখেই দেশটির অনেক ভোটার সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তারা কাকে চাইছেন। প্রথম বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে। এই বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের লাখো মানুষ প্রত্যক্ষ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ১৫ অক্টোবর। আর শেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ২২ অক্টোবর টেনেসির নাশভ্যালিতে। রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং ডেমোক্রেট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে একমাত্র বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ৭ অক্টোবর উটাহর সল্ট লেক সিটিতে। প্রতিটি বিতর্কের সময়সীমা ৯০ মিনিট। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অন্যবারের চেয়ে অনেকটা আলাদা হিসেবে দেখা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের মহামারি বদলে দিয়েছে নির্বাচনী বিতর্কের বিষয় ও প্রচারণার ধরন। এবারের নির্বাচনে অর্থনীতির চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য ও বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয়গুলো। এবারের নির্বাচনের প্রধান আলোচ্যসূচির মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ। সদ্য প্রয়াত উদারপন্থী বিচারপতি রুথ বেইডার গিন্সবার্গের উত্তরসূরি হিসেবে গত শনিবার শিকাগোর আপিল আদালতের বিচারক অ্যামি কোনি ব্যারেটকে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, বিষয়টি দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রথম বিতর্কের কেন্দ্রেই থাকবে।