শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নজিরবিহীন পরিস্থিতি

চাপে ভারত ছাড়ল অ্যামনেস্টি

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত ও প্রচার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করার অভিযোগ প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০৮

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসার কারণে দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল'। দেশটির সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে 'উইচহান্ট' বা 'ডাইনি শিকারের' মতো আচরণ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস অ্যামনেস্টি বলছে, ভারতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত, কর্মীদের ছাঁটাই এবং সব ধরনের প্রচার ও গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে সরকার। তবে এই অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত। অ্যামনেস্টির ভারতীয় শাখার রিসার্চ, অ্যাডভোকেসি এবং পলিসির জ্যেষ্ঠ পরিচালক রজত খোসলা বলেন, 'আমরা ভারতে নজিরবিহীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইনডিয়া ভারতে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারি আক্রমণ, হেনস্তা এবং হয়রানির শিকার হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা মানবাধিকার নিয়ে যেসব কাজ করছিলাম, সেগুলো থমকে গেছে। দিলিস্নর দাঙ্গা অথবা জম্মু-কাশ্মীরের কণ্ঠ রোধের বিষয়ে আমাদের তদন্তে যেসব প্রশ্ন উঠে এসেছে সরকার সেগুলোর জবাব দিতে চায়নি।' গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছিল, ভারতের রাজধানী দিলিস্নতে গত ফেব্রম্নয়ারিতে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যকার প্রাণঘাতী ধর্মীয় সংঘাতের সময় পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থার দাবি প্রত্যাখ্যান করে দিলিস্ন পুলিশ সে সময় দেশটির ইংরেজি দৈনিক 'দ্য হিন্দু'কে জানায়, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটি একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিদ্বেষপরায়ণ। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এক বছর পূর্তির সময় গত আগস্টে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেশটির সব রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি ও অঞ্চলটিতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র কল্যাণবিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে অংশ নেয়। সে সময় সংস্থাটি জম্মু-কাশ্মীরে নির্বিচারে আটক, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে ভারত সরকারের কঠোর অভিযানের নিন্দা বারবার জানিয়ে আসছে অ্যামনেস্টি। গত কয়েক বছর ধরে দেশটির সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের ঘটনা সংস্থাটির ওপর চূড়ান্ত আঘাত বলে দাবি করেছে। সংস্থাটির এক অনুষ্ঠানে ভারতবিরোধী স্স্নোগান তোলার অভিযোগে ২০১৬ সালে অ্যামনেস্টি ইনডিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। তিন বছর পর ২০১৯ সালে দেশটির আদালত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগটি খারিজ করে দেয়। এদিকে, বিদেশি তহবিল নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যামনেস্টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকারে অর্থ নিয়েছে, যা ভারতীয় আইনে অলাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না। অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। অ্যামনেস্টির পাল্টা বক্তব্য, 'মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ক্রমাগত অপদস্থ করার ভারত সরকারের অপচেষ্টার এটা সাম্প্রতিকতম নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে