মাকির্ন হুমকিতে ভীত নয় আইসিসি

জন বোল্টনের হুশিয়ারির পর আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতের ঘোষণা

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন
আফগানিস্তানে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে মাকির্ন সেনাদের বিচার করা হলে আইসিসির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের যে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাতে ভীত নয় সংস্থাটি। আইসিসি জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের কাজে অনড় থাকবে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দেয়, মাকির্ন সেনাদের বিচারের চেষ্টা করলে আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন আইসিসিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘অবৈধ’ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সংবাদসূত্র : রয়টাসর্ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার পর তৎকালীন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট জজর্ ডাবিøউ বুশের নিদেের্শ আফগানিস্তানে মাকির্ন অভিযান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান শেষ হয় ২০১৪ সালে। তবে দেশটির বিশেষ বাহিনী এখনো আফগান সেনাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতৌ বেনসুদা বলেছিলেন, আফগানিস্তানে যে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা ‘বিশ্বাস করার মতো যৌক্তিক ভিত্তি’ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ও মাকির্ন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সদস্যরাসহ আফগান যুদ্ধে লিপ্ত সব পক্ষের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতের সদস্য রাষ্ট্র নয়। সোমবার মাকির্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতকে অবৈধ আখ্যা দেন। এ আদালতে মাকির্ন সেনাদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করলে সেখানকার বিচারপতি ও প্রসিকিউটরদের ওপর মাকির্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে টলছে না আইসিসি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হেগভিত্তিক এ আদালতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। ১২৩টি দেশের সমথর্ন তাদের সঙ্গে রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইনের শাসনে পরিচালিত আদালত হিসেবে আইসিসি অবিচলভাবে কাজ করে যাবে। আইনের শাসনের ধারণা ও নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করা হবে।’ উল্লেখ্য, এই আদালত সাধারণত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের অভিযুক্ত করে থাকে। ১২০ দেশের স্বীকৃতির পর ২০০২ সালের ১ জুলাই থেকে আন্তজাির্তক অপরাধ আদালত তার কাযর্ক্রম শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রও এ আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি। নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের এর আগে, সোমবার মাকির্ন সেনাদের বিচারের চেষ্টা করলে আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দ্য হেগের আন্তজাির্তক অপরাধ আদালতে মাকির্ন সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন হুশিয়ারি দিয়েছেন, মাকির্ন সেনাদের বিচারের চেষ্টা করলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ আরোপ করা হবে। জন বোল্টন বরাবরই কড়া ভাষায় আইসিসির ভ‚মিকা নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। তবে সোমবার ওয়াশিংটনে রক্ষণশীল গ্রæপ ফেডারেলিস্ট সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে এ আদালত নিয়ে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, সেখানে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথমটি গত বছর আইসিসির কেঁৗসুলি ফাতোও বেনসুদার করা একটি আবেদন নিয়ে, যেখানে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পূণার্ঙ্গ তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা কমর্কতাের্দর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথাও সেখানে আছে। আর দ্বিতীয়টি হলো- গাজায় ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগের তদন্ত করতে ফিলিস্তিনিদের চেষ্টা। প্রথমটির ক্ষেত্রে বোল্টন বলছেন, আফগানিস্তান বা আইসিসির কোনো সদস্য দেশ যেহেতু ওই অভিযোগ করেনি, সুতরাং বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার প্রশ্ন অবান্তর। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তার বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনের ক‚টনৈতিক মিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর পেছনে তাদের আইসিসিতে যাওয়ার চেষ্টাও একটি কারণ। বোল্টন তার বক্তৃতায় আইসিসিকে বণর্না করেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবের্ভৗমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি’ হিসেবে। তার ভাষায়, আইসিসি বিভিন্ন অপরাধকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, তা নিয়ে বিতকর্ আছে। সেসব অপরাধ বিচারের এখতিয়ার এ আদালতের আছে কিনা- সে বিষয়েও প্রশ্ন আছে। সহিংস অপরাধের শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও আইসিসি ব্যথর্ হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র যেখানে সংবিধানের ওপরে আর কোনো কিছুকে স্থান দেয় না, সেখানে এই আন্তজাির্তক আদালতকে একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে করেন ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন।