শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
হতভম্ব শত্রম্ন-মিত্র উভয়ই

আরও 'বোমা ফাটাতে' পারেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, বাড়ছে শঙ্কা

হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে তিনি আরও কী করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এটা পরবর্তী প্রশাসনকে বিপদে ফেলার একটি অপচেষ্টা
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহজুড়ে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন। আর এতে হতভম্ব হয়েছেন তার শত্রম্ন এবং মিত্র উভয়েই। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সৌদি আরব আয়োজন করতে যাচ্ছে জি-২০ সম্মেলন। এর আগে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর এই জোটের সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। আর এবার ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জোটটির ক্ষতির পরিমাণ কোথায় নিতে পারেন, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন অনেকেই। সংবাদসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স

নির্বাচনে জালিয়াতির 'ভিত্তিহীন' অভিযোগ নিয়ে নিজ দেশে আইনি লড়াই শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে নিজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার পরও তিনি আগের মেয়াদের নির্বাচনি প্রতিশ্রম্নতি পূরণে বেপরোয়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। তারই অংশ হিসেবে নির্বাচনের ফল স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর গত সপ্তাহে তিনি আফগানিস্তান থেকে অর্ধেক মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আফগান সরকারের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে অঞ্চলটিতে তালেবানের শক্তি বৃদ্ধি ঘটবে। এমনকি সেনা কমানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের নিজ দলের কিছু নেতাও। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম কিনজিনজার ওই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এটা পরবর্তী প্রশাসনকে বিপদে ফেলার একটি অপচেষ্টা।'

আফগান মিশনের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, 'দেশটিতে যে পরিমাণ সেনা থাকছে, তাতে তারা নিজেদের সুরক্ষা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না।'

এদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, নিজেদের রক্ষার জন্য রেখে আসা আড়াই হাজার সেনাই যথেষ্ট। এছাড়া ইরাকেও সেনা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ইরাকের উদ্বেগের কারণে কখন এবং কীভাবে সেনা কমানো হবে, তা নিয়ে ইরাক সরকার ও সেখানে যৌথ বাহিনীর দায়িত্বে থাকা মার্কিন জেনারেলের মধ্যকার আলোচনার গতি ধীর হয়ে পড়েছে।

সেনা প্রত্যাহার ছাড়াও আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ট্রাম্প আরও কী করতে পারেন, তা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ সৌদি আরব কয়েকদিনের মধ্যে যখন জি-২০ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে, তখন এই প্রশ্ন বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে।

করোনা মহামারির কারণে এবার ভার্চুয়াল সম্মেলন। আর তাতে ভিডিওলিংকে যুক্ত হয়ে ট্রাম্প বক্তব্য রাখবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর থাকা প্রায় নিশ্চিত। অনেকেই মনে করছেন, অন্য বিশ্বনেতাদের সামনে ব্যক্তিগতভাবে পরাজিত মানুষ হিসেবে উপস্থিত থাকাকে 'বিব্রতকর' বলে ভাবতে পারেন ট্রাম্প।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার বাবা বাদশাহ সালমান ভার্চুয়াল বৈঠক পছন্দ না করলেও মহামারির কারণে তাতে বাধ্য হচ্ছে রিয়াদ। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়া যুবরাজ সালমান এই সম্মেলনকে নিজের ইমেজ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এই সম্মেলনে যুবরাজের নেতৃত্বে সৌদি আরবের নেওয়া বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ তুলে ধরা হতে পারে।

এবারের জি-২০ সম্মেলনের ঘোষিত লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে করোনা মহামারি ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করা। উভয় ইসু্যতেও ব্যর্থতার স্বাক্ষর রেখেছে ট্রাম্পের নেতৃত্ব। তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্যতে দুনিয়ার শীর্ষে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আগের জি-২০ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত ঘোষণার ভাষায় পরিবর্তন না করলে তাতে স্বাক্ষর করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। আর এবারের সম্মেলন কোনো কারণে দুর্বল হয়ে গেলে হতাশ হতে পারে সৌদি। কেননা, এবারের সম্মেলন নিয়ে সৌদি শাসকদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি।

এদিকে, নিজের মেয়াদকালে সৌদি রাজপরিবারকে রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। এর কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার জীবনী লেখক বব উডওয়ার্ডের কথায়। সৌদি শাসকদের রক্ষায় ট্রাম্প শেষ সময়ে আরও কী পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। অনেকের ধারণা, ইয়েমেনে সৌদি আরবের শত্রম্ন হুতিদের 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন ট্রাম্প। আর তা হলে হুতি সমর্থক ইরানকে মোকাবিলা করা বাইডেনের জন্য আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে