ইরানে পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা

সংযম রক্ষার আহ্বান জাতিসংঘের

হত্যায় জড়িতের অভিযোগ অস্বীকার ইসরাইলের যেভাবে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায় ইরান

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ
ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মোহসেন হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ায় সংস্থাটির মুখপাত্র এ আহ্বান জানান। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা গত শুক্রবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান মোহসেন ফাখরিজাদেহকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। বিজ্ঞানী হত্যার বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এমন প্রেক্ষাপটে ফাখরিজাদেহর হত্যাকান্ডের ঘটনায় উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, 'আমরা যেকোনো হত্যাকান্ড বা বিচারবহির্ভূত হত্যার নিন্দা জানাই।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে পারে, এমন যেকোনো পদক্ষেপ এড়ানোর আহ্বান জানাই।' মোহসেন হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ দাবি করেছেন, এ ঘটনায় ইসরাইলের হাত রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসমূলক এই কাজের নিন্দা' করারও আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উলেস্নখ্য, মোহসেন ফাখরিজাদেহকে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে পশ্চিমা বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এছাড়া কূটনীতিকরা প্রায়ই তাকে 'ইরানের বোমার জনক' আখ্যা দিয়ে থাকেন। হত্যায় জড়িতের অভিযোগ অস্বীকার ইসরাইলের এদিকে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার অভিযোগ তোলা হলেও তা অস্বীকার করেছে তেল আবিব। দেশটির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সেটেলমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী তাজাচি হানেগবি দাবি করেছেন, 'তেহরানের ওই বিজ্ঞানীকে হত্যার নেপথ্যে কে আছে, সে বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই।' উলেস্নখ্য, হানেগবি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ইসরাইলের টিভি চ্যানেল 'এন-১২' এর এক অনুষ্ঠানে এই মন্ত্রী বলেন, 'এটা কে করেছে, সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আসলেই আমার কাছে কোনো সূত্র নেই।' ইরানের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেন, 'এই হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য তৈরি।' ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক এক উপস্থাপনায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিশেষভাবে মোহসেন ফাখরিজাদেহর নাম উলেস্নখ করেছিলেন। যেভাবে প্রতিশোধ নিতে চায় ইরান ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির নেতারা। তারা বিশ্বাস করেন, ইসরাইলই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে এর প্রতিশোধ '?ইরান যখন সঠিক সময় এসেছে বলে মনে করবে তখনই' নেওয়া হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, 'হঠকারী কোনো কিছু করা হবে না। প্রতিশোধ নেওয়ার সময়টা ইরান নিজেই বেছে নেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, ইরানের মাটিতে আক্রমণ চালিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে দেশটির শত্রম্নরা এক বিরাট এবং অপমানজনক আঘাত হেনেছে।' শুক্রবারের হত্যাকান্ডটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও চারজন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। সেগুলোর জন্যও ইসরাইলকেই দায়ী করেছে ইরান। এখন যে প্রশ্ন সবার মনে আসবে তা হলো, তেহরান কীভাবে এর পাল্টা জবাব দেবে? কখন দেবে? ইরানের সামরিক বাহিনী বলেছে, 'বজ্রের মতো আঘাত হেনে?'? প্রতিশোধ নেওয়া হবে। প্রতিশোধের দাবিতে তেহরানের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। একজন বিক্ষোভকারী সেখানে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ দুই মাসে একটা 'যুদ্ধের পরিস্থিতি' তৈরি করতে চাইছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কথাগুলো ছিল অবশ্য অনেক মেপে মেপে, হিসেব করে বলা। তিনি বলেন, 'প্রতিশোধ নেওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু হয়তো এখনোই তা হবে না।' ইসরাইলের দিকে ইঙ্গিত করে রুহানি বলেন, 'ইরান যথাসময়ে ব্যবস্থা নেবে, ফাঁদে পা দেবে না। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের হাতে কী তাস আছে, তা বুঝে ফেলেছি। তারা সফল হবে না।'