নতুন যুদ্ধাস্ত্রে সেনা সাজাবেন পুতিন

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়ায় গিয়ে মন্তব্য রুশ প্রেসিডেন্টের মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই এই মহড়া

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহড়া প্রত্যক্ষ করছেন পুতিন
রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া প্রত্যক্ষ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার সামরিক মহড়া দেখার সময় প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের যুদ্ধাস্ত্র ও উপকরণ দিয়ে সেনাবাহিনী সাজাবেন তিনি। সামরিক সক্ষমতা প্রদশের্ন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া। গত মঙ্গলবার চীন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় শুরু হওয়া এ মহড়ায় দেশটির তিন লাখ সেনা অংশ নিচ্ছে। উল্লেখ্য, এক হাজারের বেশি সামরিক বিমান, ৩৬ হাজার ট্যাংকের এই মহড়া নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলো সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্ পূবর্ সাইবেরিয়ায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠেয় এ মহড়ার নামকরণ করা হয়েছে ভস্তক-২০১৮ (পূবর্-২০১৮)। এতে অংশ নিচ্ছে মঙ্গোলীয় ও চীনা সেনারাও। সীমান্তের কাছে এ ধরনের বিশাল মহড়াকে যেন হুমকি হিসেবে দেখা না হয়, সেজন্য মস্কো দেশ দুটির সেনাবাহিনীকে ভস্তক মহড়ায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এর আগে ১৯৮১ সালে স্নায়ুযুদ্ধের সময় এত বড় সামরিক মহড়া হয়েছিল। তবে এবারের মহড়ায় বেশি সেনা অংশ নিচ্ছে। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে রুশ প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘এই প্রথম আমাদের সেনাবাহিনী ও যুদ্ধজাহাজগুলো এ ধরনের কঠিন ও বড়মাত্রার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’ মহড়ায় যোগ দেয়া সেনা সদস্যদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, রাশিয়া শান্তিতে বিশ্বাসী দেশ, যার লক্ষ্য যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা তৈরি করা। আর একজন সেনা সদস্যের দায়িত্ব হলো তার দেশ এবং মিত্রদের রক্ষা করা। তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। তাই তাদের সবার্ধুনিক প্রজন্মের যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ এবং আন্তজাির্তক সামরিক সহায়তা উন্নত করতে যাচ্ছি।’ রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্প্রচারিত চিত্রে মহড়ায় অংশ নেয়া সারি সারি ট্যাংক, সঁাজোয়া যান ও যুদ্ধসরঞ্জামের চলাচল দেখা গেছে। দেখা গেছে, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানের উড্ডয়নের ছবিও। এক ভিডিওতে বেরিং প্রণালির রাশিয়া উপক‚লে নোঙর করা বড় একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে মটরাইজড আকির্টক ব্রিগেড ও রুশ নদার্নর্ ফ্লিটের সেনাদের নামতে দেখা গেছে। এসব কমর্কাÐকে মহড়ার প্রথম পবের্র অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পবর্ ১৭ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত চলবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা। মহড়ার প্রথম পবের্ দূরবতীর্ অঞ্চলে সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি, পদাতিক ও নৌ-সেনারা কত দ্রæত একে অপরকে সহায়তা করতে পারে, তার পাশাপাশি কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ঝালিয়ে নেয়া হচ্ছে। পরের অংশে থাকবে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার মহড়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাগের্ই শোইগু ১৯৮১ সালে সোভিয়েত আমলে আয়োজিত ‘জাপাদ-৮১’ মহড়ার পর এবারের মহড়াকেই সবচেয়ে বড় বলে অভিহিত করেছেন। ভস্তক-২০১৮’র মাধ্যমে রাশিয়া ও চীন তাদের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পকের্র বিষয়ে জানান দিচ্ছে বলেই ধারণা পযের্বক্ষকদের। রাশিয়া যে তাদের জনবিরল দূরপ্রাচ্যের ভ‚খÐ রক্ষায় প্রস্তুত, মহড়ায় সে বিষয়ে বেইজিংয়ের জন্য অঘোষিত সতকর্বাণী থাকছে বলেও মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা। মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই এই বিশাল মহড়ার আয়োজন করেছে রাশিয়া। এই মহড়া গভীরভাবে পযের্বক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি রাখা যুক্তরাষ্ট্রও মহড়াটি নিবিড়ভাবে পযের্বক্ষণ করছে। যে স্থানে এবারের ভস্তক-২০১৮ মহড়াটি হচ্ছে, সেখান থেকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দূরত্ব পঁাচ হাজার কিলোমিটার। চীন সীমান্তের কাছে অনুষ্ঠিত এ মহড়ার ওপর জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ারও নজর রাখছে। অনেক পযের্বক্ষকই এবারের মহড়াকে ওয়াশিংটনের প্রতি মস্কোর হুশিয়ারি হিসেবে দেখছেন। এদিকে, চলতি মাসেই ভ‚মধ্যসাগরের পূবার্ঞ্চলে বড় ধরনের নৌ-মহড়া করার কথা রয়েছে মস্কোর। ক্রেমলিন একইসঙ্গে সিরিয়ার ইদলিবে আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের শেষ শক্ত ঘঁাটিতেও ধারাবাহিক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।