নির্বাচনি কর্মকর্তার অভিযোগ

সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন ট্রাম্প

হ ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ ওড়ালেন উইলিয়াম বারও হ হোয়াইট হাউসে আরও ৪ বছর থাকার কথা বললেন ট্রাম্প

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সহিসংতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন নির্বাচন কর্মকর্তা। গ্যাব্রিয়েল স্টার্লিং নামের এই কর্মকর্তা বলেন, 'ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতির যে অভিযোগ করেছেন, সেটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট কোনো সহিসংতার দায় তাকেই বহন করতে হবে।' বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স গ্যাব্রিয়েল স্টার্লিং বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত তার ভাষা নরম করা। অন্যথায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।' ট্রাম্প শিবিরের দাবির মুখে জর্জিয়ায় দ্বিতীয় দফা ভোট পুনর্গণনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে সেখানে সামান্য ব্যাবধানে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্প শিবিরের মুখপাত্র টিম মুর্তোফ বলেন, তারা শুধু এটি নিশ্চিত করতে চাইছেন যে, সব বৈধ ভোট যেন গণনা করা হয় এবং অবৈধ ভোট যেন গণনা করা না হয়। তিনি বলেন, 'কারও হুমকি বা সহিংসতায় যুক্ত হওয়া উচিত নয়। এমন কিছু ঘটে থাকলে আমরা পুরোপুরিভাবে এর নিন্দা জানাই।' এদিকে, মঙ্গলবার ট্রাম্পের মিত্র ও দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছেন, ফল বদলে দেওয়ার মতো কোনো জালিয়াতি নির্বাচনে হয়নি। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।' তার ভাষায়, 'এখন পর্যন্ত আমরা এমন জালিয়াতির প্রমাণ দেখতে পাইনি যা নির্বাচনের ফলাফল বদলে দিতে পারে।' পরাজয় স্বীকার না করা রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের জন্য উইলিয়াম বারের এমন মন্তব্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে যখন জো বাইডেনের বিজয়ের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে, তখন পরাজিত হওয়া রাজ্যগুলোয় একের পর এক মামলা করে চলেছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান শিবির। নির্বাচনে বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। তবে কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই একের পর পর এক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে চলেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। যখন উইলিয়াম বারের এই ঘোষণা এল, তখনও ট্রাম্প কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই টুইটারে আবারও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচন নিয়ে একটি দাবি করা হয়েছে যে, ভোটিং মেশিনগুলো হ্যাক করে এমনভাবে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে যে, সেটি ভোটের ফলাফল পাল্টে বাইডেনের পক্ষে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই দাবি নিয়ে কথা বলেছেন উইলিয়াম বার। তিনি বলেন, 'বিচার বিভাগ ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এই দাবির ব্যাপারে তদন্ত করেছে। তারা এখন পর্যন্ত এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি।' এদিকে, উইলিয়াম বারের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি এবং জেনা এলিস একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, অনিয়মের এবং পদ্ধতিগত জালিয়াতির যথেষ্ট প্রমাণের ব্যাপারে সেটা নিয়ে তদন্ত বা জ্ঞান ছাড়াই তিনি মতামত দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।' বারের এই মন্তব্যের পর সিনেটে ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার বলেন, 'আমার ধারণা, এরপরে তিনিই হয়তো বরখাস্ত হতে চলেছেন।' এর আগে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অত্যন্ত ভুল মন্তব্য করার জন্য সাইবার সিকিউরিটি এবং ইনফ্রাসট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিসা) প্রধান ক্রিস ক্রেবসকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে আরও ৪ বছর থাকার কথা বললেন ট্রাম্প এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বড়দিনের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে হোয়াইট হাউসে আরও চার বছর থাকার কথা বলেছেন। এদিন তিনি বলেন, 'হতে পারে তা ২০২১ সালের জানুয়ারি বা ২০২৫ সালের জানুয়ারি শুরু হবে।' করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মাস্ক পরার জন্য নির্দেশিকা জারি করলেও হোয়াইট হাউসে বড়দিনের অনুষ্ঠানে অনেকেই তা পরেননি। অনুষ্ঠান কক্ষে অনেককেই জোরে কাশতে শোনা গেছে। সেখানে ট্রাম্প বলেন, 'চমৎকার চার বছর ছিল। আমরা আরও চার বছর থাকার চেষ্টা করছি। অন্যথায় চার বছর পর আবার আপনাদের সঙ্গে এখানে দেখা হবে।' অনুষ্ঠানে আবারও ট্রাম্প নিজেকে নির্বাচনে জয়ী বলে উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেন, 'তারা এটি পছন্দ করেনি।' গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন ট্রাম্প। তবে এখনও তিনি জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে মেনে নেননি। যদিও তার প্রশাসন প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে। ট্রাম্পের এক প্রচার উপদেষ্টা বলেছেন, ট্রাম্প তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন। অভিষেক অনুষ্ঠানের কাছাকাছি সময়ে এটি আয়োজন করা হতে পারে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে পারেন ট্রাম্প। যাতে করে নির্বাচনি লড়াইয়ে তার ফিরে আসার দরজা উন্মুক্ত থাকে।