আফগান সংঘাত সহসা শেষ নয়

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আফগানিস্তানে মাকির্ন সেনাদের তল্লাশি
কয়েক দিন আগে আফগান ও মাকির্ন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর যৌথ বিমান হামলায় ইসলামিক স্টেট খোরাসানের নেতা আবা সাদ এরহাবি এবং তার ১০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে কুনার প্রদেশে আরেকটি মাকির্ন বিমান হামলায় তার পূবর্সূরি আবু সাইদ নিহত হয়েছিলেন। আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই গ্রæপের হামলার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে কাবুলের একটি স্কুলে হামলার ঘটনাও রয়েছে, যেখানে বেশ কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়। দৃশ্যমান কিছু সাফল্য দেখা গেলেও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কাযর্ত দ্রæত অবনতি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় তালেবান এবং আইএসের ভয়াবহ বেশ কিছু হামলা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে কাবুলে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে রকেট হামলার ঘটনাও রয়েছে। প্রেসিডেন্টের বাণী চলাকালে তার প্রাসাদ লক্ষ করে এই রকেট হামলাকে তালেবানের শক্তি প্রদশের্ন এক ‘মহড়া’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। জঙ্গিগোষ্ঠীটির এই হামলার বাতার্ হলোÑ তারা চাইলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেও আঘাত হানতে পারে। এই সহিংসতার তীব্রতা এমন সময় বাড়ছে, যখন আগামী ২০ অক্টোবর দেশটির পালাের্মন্ট নিবার্চন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং যখন দেশ পরিচালনার ব্যাপারে হিমশিম খাচ্ছে আফগান সরকার। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকার অভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে দুবর্ল হয়ে পড়েছে। ঘানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র হানিফ আতমারের পদত্যাগের পর গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াইস আহমাদ বারমাক, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারিক শাহ বাহরামি এবং গোয়েন্দা প্রধান মাসুম স্ট্যানেকজাইও তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ঘানি এবং তাদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে বলেছেন। যদিও দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক আতমারের পরিবতের্ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত হামদুল্লাহ মোহিবকে নিযুক্ত করা হয়েছে। আসলে বিভিন্ন গুরুত্বপূণর্ ইস্যুতে ঘানি সরকারের মধ্যে বড় ধরনের মতবিরোধের কারণেই এসব পদত্যাগের ঘটনাগুলো ঘটেছে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দিকে চালিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যথর্তার কারণে সেখানে অন্যান্য শক্তিগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রাশিয়া এখন সক্রিয়ভাবে আফগানিস্তানের কৌশলগত পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তালেবানের সঙ্গে বহু বছরের যোগাযোগের কারণে, মূলত ইসলামিক স্টেটের তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই মস্কো এই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির বাস্তবতার পরিবতর্ন ঘটাতে চায়। যদিও এ ধরনের আলোচনার জন্য আগে যেসব চেষ্টা হয়েছে, এতে তেমন সুফল মেলেনি। এরপরও গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২টি দেশকে আফগান শান্তি সম্মেলনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাশিয়া। তালেবানেরও এতে অংশ নেয়ার কথা ছিল। কাবুলের বিরোধিতার কারণে এবং আফগান সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যই রাশিয়া এই সম্মেলন স্থগিত করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেগের্ই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়া, ‘আফগানদের অধীনে শান্তি আলোচনা চায় এবং আফগানিস্তানের সরকারকে এ ব্যাপারে কাযর্কর সহযোগিতা করার জন্য তারা প্রস্তুত।’ আফগানিস্তানের আজকের বাস্তবতা হলো তালেবান যখন শক্তি প্রদশের্নর যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অবস্থা তখন বিপযর্স্ত। অথচ মাস কয়েক আগেই মাকির্ন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বেশ গালভরা বুলি আউড়েছিলেন, আফগানিস্তানে তালেবান এখন বেকায়দায়। অথচ সেই তালেবানই কাবুলের বুক কঁাপিয়ে দিয়েছে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নিজেদের আফগান নীতির ওপর থেকেই এখন আস্থা হারাতে শুরু করেছে। গত বছর অনেক তজর্ন-গজের্নর সঙ্গে এই নীতি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তারা এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জাতির ব্যাপারে সমন্বিত চিন্তাভাবনার সুযোগই পায়নি তারা। ফল হিসেবে আঞ্চলিক শক্তির দ্ব›দ্বই এখন দেশটির ভবিষ্যৎ নিধার্রণ করতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে ভারতকে বাদ রাখার পরও রাশিয়া পরে আবার আফগানিস্তান সম্মেলনে ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পরিবতির্ত পরিস্থিতি সম্পকের্ অবগত রয়েছে দিল্লি। তাদের প্রত্যাশা হলো, সেখানে তাদের স্বাথের্র বিষয়টি যেন চাপা না পড়ে; বিশেষ করে যেখানে তারা যথেষ্ট ক‚টনৈতিক ও অথৈর্নতিক বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু আশাবাদ কোনো নীতি হতে পারে না। তাই ভারতকে আফগানিস্তানের অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে আরও সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ বিষয়ে সবাই প্রায় নিশ্চিত, আফগান সংঘাতের শেষ দেখা যাচ্ছে না। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর