পাখি ও মাছের ঝঁাক বেঁধে চলার রহস্যময়তা

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
একঝঁাক স্টার পাখি, দেখলে মনে হবে কেউ যেন জাদুকাঠি দিয়ে তাদের সুন্দর এক নকশা অনুযায়ী সাজিয়ে তুলছে। হাজার হাজার পাখি আকাশে যেন উড়ছে, পানিতেও এমন নকশা দেখা যায়। প্রাণীরা দলবদ্ধভাবে নিখুঁত কারুকাযর্ সৃষ্টি করে, যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু প্রাণীরা কীভাবে এবং কেন এমনটা করে? জামাির্নর কনস্টানৎস শহরে মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউটের জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স জডার্ন সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন। তিনি মাছের ঝঁাক নিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের মাঝে সঁাতার কাটার জাদুময় অভিজ্ঞতা সত্যি ভোলার নয়। এ যেন নৃত্যপরিচালক ছাড়াই কোরিওগ্রাফি! কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব হয়? অতীতে মানুষ সহজ নিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রাণীদের ঝঁাকের আচরণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতো। যেমন, সবাই নাকি সদার্রকে অনুসরণ করে! অথবা শত্রæকে এড়িয়ে যেতে প্রাণীরা নাকি ঝঁাকে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু আজ সেই ধারণা বদলে গেছে। অ্যালেক্স জডার্ন বলেন, ‘আমরা জানি, এমন প্রণালিতে প্রত্যেক প্রাণীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা যেভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে বা প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটা মোটেই এক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আচরণে স্বয়ংক্রিয় কোনো প্রক্রিয়া নেই। আজ আমরা তাদের পযের্বক্ষণ করার সময় প্রত্যেকটি প্রাণীর ওপর লক্ষ রেখে আলাদা করে তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করতে পারি। এর ভিত্তিতে প্রশ্নও করতে পারি।’ ব্যক্তি নিয়ে কীভাবে সমষ্টি সৃষ্টি হয়? সেটা জানলে সেই জ্ঞান মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। তখন নেটওয়াকর্ বা অন্য কোনো সমষ্টিতে মানুষের আচরণ বোঝা যাবে। আফ্রিকার মধ্যভাগে টাঙ্গানাইকা হ্রদে সিচিল্ডস গোত্রের মাছের ঝঁাকের আচরণ অ্যালেক্স জডাের্নর কাছে বিশেষ আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছে। কখনো তারা ঝঁাক বেঁধে এগিয়ে যায়, কখনো আলাদা থাকে। তাই তারা পযের্বক্ষণের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। কনস্টানৎস শহরের ল্যাবেও সেটা সম্ভব। সেখানে গবেষকরা আফ্রিকার হ্রদের একটা অংশ গড়ে তুলেছেন। এতে নানা প্রজাতির সিচিল্ডস মাছ মিলেমিশে রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মাছ সামাজিক আচরণে অভ্যস্ত, বাকিরা একেবারেই নয়। অ্যালেক্স জডার্ন বলেন, ‘এই প্রজাতির মাছ আমার মতো অনধিকার প্রবেশকারীকে বরদাস্ত করবেÑ এমন সম্ভাবনা অনেক কম। তারা আমাকে ধারে-কাছে আসতেই দেবে না।’ এই মুহ‚তের্ মাছগুলো কেন ঝঁাকে ঘোরাফেরা করছে না? এমন আচরণের ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যালেক্স বলেন, ‘পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর। সেখানে একা ও আত্মকেন্দ্রিক হলে কঠিন পরিস্থিতেতে পড়তে হতে পারে। সেই নিরাপদ পরিবেশে হয়তো নিয়ম মানার ও সংঘবদ্ধ হয়ে কিছু করার চাপ অনেক শিথিল হয়ে পড়ে। তখন সবাইকে নিজের মতো আচরণ করতে দেখা যায়।’ এই গবেষণার অন্যতম ফল হিসেবে জানা গেছে, যে প্রাণীরা টিকে থাকতেই ঝঁাকের মধ্যে ঘোরে। তবে মাছেরা কখন ঝঁাকের মধ্যে বাকিদের অনুসরণ করবে, কখনই বা আলাদা হয়ে যাবেÑ কীভাবে তারা সেই সিদ্ধান্ত নেয়? এই প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সিচিল্ডস মাছ যে দলবদ্ধ হয়ে বেশ মজা পায়, সেটা বেশ স্পষ্ট। ঝঁাকের মধ্যে তারা যে শক্তিশালী, সেই বোধ হয়তো তাদের রয়েছে। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে