দীঘর্ বৈঠকের পর অভিবাসী প্রশ্নে সমঝোতায় ইইউ

অভিবাসীর বোঝা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ দেশ ৩০০ কোটি ইউরো পাচ্ছে তুরস্ক

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইইউ বৈঠক শেষে হাস্যোজ্বল অ্যাঙ্গেলা মাকের্ল
টানা ১০ ঘণ্টা আলোচনার পর শরণাথীর্ ইস্যুতে ঐকমত্যে পেঁৗছেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। শরণাথীের্দর আশ্রয় ও তাদের যাচাই-বাছাইয়ের এই প্রস্তাবটিতে শুক্রবার ঐকমত্যে পেঁৗছান ২৮ দেশের নেতারা। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরের আগে ইউরোপীয় নেতারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ সামলাতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। সংবাদসূত্র : বিবিসি সম্প্রতি ভ‚মধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা শতাধিক শরণাথীর্র একটি জাহাজ ফিরিয়ে দেয় ইতালি। এই শরণাথীর্রা ইতালি অভিমুখী ছিল, তাই তাদের জামার্ন দাতব্য সংস্থার জাহাজ ‘লাইফলাইনে’ করে ইতালির বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইতালির নতুন ডানপন্থি সরকারের দাবি, ইতালি একা শরণাথীের্দর দায় নেবে না। এর জন্য ইউরোপের অন্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসবে। আবার শরণাথীর্ ইস্যুতে খোদ নিজের শরিক দলের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন জামার্ন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মাকের্ল। জোটের শরিক সিএসইউ নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হস্টর্ সিহোফার জানিয়েছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে বাভারিয়া রাজ্য সীমান্ত থেকে তিনি শরণাথীের্দর ফেরত পাঠানো শুরু করবেন। গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলনের প্রথম দিনেই ইতালি হুমকি দিয়ে বলে, শরণাথীর্ ইস্যুতে তারা সহযোগিতা না পেলে জোটের যৌথ ঘোষণায় ভেটো দেবে। এরপর দীঘর্ আলোচনার পর শেষ পযর্ন্ত শুক্রবার সকালে সমঝোতায় পেঁৗছান ইউরোপীয় নেতারা। তারা জানিয়েছেন, সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইতালি ও গ্রিসের ওপর চেপে বসা হাজার হাজার অভিবাসীর বোঝা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে রাজি হয়েছে অন্য দেশগুলো। স্বেচ্ছামূলক ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নতুন করে শরণাথীর্ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে। এই কেন্দ্রগুলোতে কারা সত্যিকারের শরণাথীর্ ও কারা অনিয়মিত শরণাথীর্ তা যাচাই-বাছাই করা হবে। সেখান থেকেই অনিয়মিত শরণাথীের্দর ফেরত পাঠানো হবে। জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শরণাথীের্দর অবাধ চলাচলের সুযোগে কড়াকড়ি আরোপের ব্যাপারেও নতুন এই যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে। এতে সমুদ্র ও স্থলপথে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি তুরস্ক ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে অথৈর্নতিক সাহায্য বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ইইউ বৈঠকে সমঝোতার পর ইতালির প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের পর ইউরোপ আরও দায়িত্বশীল হলো, বাড়াল সংহতির হাত। আমরা এখন থেকে আর একা নই।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখেঁার মতে, বৈঠকের পর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পথ আরও সক্রিয় হলো। কিছু কিছু বিষয়ে একমত হলেও ‘মতপাথর্ক্য নিরসন’ করে অভিবাসী সংকট মেটাতে ইউরোপের আরও অনেক কাজ করা বাকি বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন জামার্ন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মাকের্লও। শুক্রবারের যৌথ ঘোষণায় ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সীমান্তে সুরক্ষা জোরদারের ব্যাপারেও একমত হয়েছেন। বুধবার থেকে ব্রাসেলসে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের প্রথম থেকেই ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে মতবিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। আফ্রিকা দিয়ে অসংখ্য শরণাথীর্ ইতালি ও গ্রিসে প্রবেশ করার পর দেশ দুটি ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে এ চাপ ভাগ করে নেয়ার আহŸান জানালেও অনেক দেশই এ বিষয়ে তাদের জোরাল আপত্তির কথা জানায়। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল বলছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ ২০১৫ সালের মতো না হলেও নতুন করে আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে প্রবেশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকট মোকাবেলায় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভিবাসন কেন্দ্র বানাতে ইউরোপ প্রস্তাব দিলেও মরক্কো প্রথম থেকেই এ ধরনের ভাবনার বিরোধিতা করে আসছে। পযের্বক্ষকরা বলছেন, দেশের ভেতর অভিবাসী ইস্যু নিয়ে চাপে থাকা জামার্ন চ্যান্সেলরের জন্যও এবারের বৈঠক স্বস্তির হতে পারে। ৩০০ কোটি ইউরো পাচ্ছে তুরস্ক এদিকে, তুরস্কে আশ্রয় নেয়া শরণাথীের্দর সহায়তায় বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি ইউরো চলতি বছরই দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। জামার্ন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মাকের্ল বলেন, ‘আমরা তুরস্ককের দ্বিতীয় দফায় আথির্ক সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছি।’ ২০১৬ সালের মাচের্ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক এ বিষয়ে সমঝোতায় আসে। এজিয়ান সাগর দিয়ে অভিবাসী ঢল ঠেকাতে ও তুরস্কে অবস্থানরত ৩০ লাখ শরণাথীের্ক সহায়তায় পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেয় ইইউ। শরণাথীের্দর জন্য তখন ইইউ ৬০০ কোটি ইউরো সহায়তার ঘোষণা দেয়। সেটারই দ্বিতীয় অংশ ২০১৮ সালের মধ্যে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই বৈঠকে।