শান্তি ফেরেনি শ্রীলংকায়

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিখেঁাজ প্রিয়জনদের সন্ধান দাবি তামিলদের
শ্রীলংকার উত্তরাঞ্চলের একটি শহর কিলিনচ্চি, যেটা একসময় তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের সদর দপ্তর ছিল। ১০ বছর আগে গৃহযুদ্ধের সময় এই শহরটি ছিল বিধ্বস্ত, ধংসস্তূপে ভরা একটি নগরী। কিন্তু আজ এখন সেটি ব্যস্ত একটি শহরে পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়কজুড়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম মেশিন, নানা ধরনের দোকানে ভরপুর এই কিলিনচ্চি শহর। বাহ্যিকভাবে তামিল বিদ্রোহীদের সাবেক এই ঘঁাটির অনেক পরিবতর্ন হয়েছে। কিন্তু সেই গৃহযুদ্ধের ক্ষত এখনো রয়ে গেছে তামিল সংখ্যালঘুদের মনের ভেতর। শহরের এক প্রান্তে আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে বিক্ষোভ করছে কান্দাস্বামী পুন্নমা। তারা সরকারের কাছে তাদের ছেলেমেয়ের সন্ধান চাইছেন, যারা সেই যুদ্ধে পরাজয়ের পর সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করার পর থেকে নিখেঁাজ রয়েছে। সেদিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলছেন, ‘যুদ্ধের শেষ মুহ‚তর্গুলোর পর যখন আমরা বিদ্রোহী এলাকা থেকে বেরিয়ে এলাম, আমরা কঁাটাতারের একটি বেড়ার মুখে পড়লাম। তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, এমন সবাইকে আত্মসমপর্ণ করার নিদের্শ দিল সেনাবাহিনী এবং সবাইকে সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রæতি দিল।’ কান্দাস্বামী পুন্নমা বলেন, ‘তখন আমার ছেলে, পুত্রবধূ এবং তাদের দুই সন্তান নিজেদের সমপর্ণ করল। সেনাসদস্যরা তাদের একটি বাসে করে নিয়ে গেল। আমরা সবাই কঁাদতে কঁাদতে তাদের চলে যাওয়া দেখলাম। সেই শেষবার তাদের আমরা দেখলাম।’ তিন দশকের সেই লড়াইয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিখেঁাজ হয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই তামিল। যুদ্ধ হয়তো শেষ হয়েছে, তবে এর মানবিক বিপযের্য়র ছাপ এখনো রয়ে গেছে। যুদ্ধের পর পুনগর্ঠনে অনেক কিছুই করা হয়েছে এসব এলাকায়। কিন্তু সত্যিই কি তামিল এলাকায় শান্তি এসেছে? ‘সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ’র বিশ্লেষক পাকিসতি সারাভানামুত্তু তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না শান্তি এসেছে। আসলে এখন আমরা যুদ্ধ-পরবতীর্ একটি পরিস্থিতিতে আছি। আমাদের এখন সংঘাত পরবতীর্ ব্যবস্থাগুলোয় যাওয়া দরকার, যার মাধ্যমে সংঘাতের মূল কারণগুলো আর না থাকে বা তৈরি না হয়।’ সারাভানামুত্ত বলেন, ‘সাবেক সরকার হয়তো মনে করেছিল, সামরিক বিজয়ই এই সংঘষের্র সমাধান। কিন্তু সহিংসতার মূল কারণগুলো সমাধানে অনেক প্রতিশ্রæতির কথা বলা হয়েছিল, এর কিছু হয়েছে, হয়তো বাস্তবায়নও হচ্ছে, কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।’ পরাজিত, অপমানিত এবং ভীত তামিলরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তাদের স্বায়ত্তশাসন অজর্ন হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে না। তাদের কাছে এখন মূল গুরুত্বপূণর্ বিষয় হচ্ছে, তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণের ঘটনাগুলো তদন্তে চলতি বছরের শুরুতে একটি দপ্তর খোলা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান সালিয়্যাপিরিজ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি দেশ হিসেবে তখনই আমরা এগোতে পারবো এবং পুনমির্লন ঘটাতে পারবো, যখন মানুষ মেনে নেবে, সেখানে কিছু অনিয়ম হয়েছে। সিংহলিদের এটা মেনে নিতে হবে যে, সেখানে অনিয়ম হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ নিখেঁাজ নয়, বরং গুমের শিকার হয়েছে এবং বলতে হবে যে, এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না।’ শ্রীলংকার সরকারের মুখপাত্র শিরাল লাক্তেলাগা জোর দিয়ে বলছেন, সব নিখেঁাজের ঘটনা তদন্ত করতে করে দেখতে চায় বতর্মান সরকার। তামিল তরুণদের এখনো আটকে রাখা হয়েছে, এ রকম সব অভিযোগ তিনি নাকচ করে দিলেন। লাক্তেলাগা বলেন, ‘সরকারি দপ্তরের মাধ্যমে মানুষদের কাছ থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা এখনো চলছে। নিখেঁাজদের বিষয়ে যে কেউ বলতে পারেÑ সেটা ৪০ হাজার, ১০ হাজার, ৩০ হাজার, এক লাখ। কিন্তু এখন সরকারি কাযর্ক্রমের বিষয়ে এসব তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কেন শ্রীলংকার সরকার এসব লুকিয়ে রাখবে?’ তবে এসব আশ্বাস শান্ত করতে পারছে না কিলিনচ্চিতে স্বজন হারানো মানুষদের। নিখেঁাজদের স্বজনরা বলছেন, শুধুমাত্র তাদের প্রিয়জন যখন ঘরে ফিরে আসবে, তখনই এই যুদ্ধ শেষ হবে। আর সত্যিকারের শান্তি ফিরে আসবে তখন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ