ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে পিয়ংইয়ং

কোরীয় নেতাদের বৈঠক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ম এখনই সুযোগ আবারও মিলে যাওয়ার : মুন ম উত্তরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ফের আলোচনায় প্রস্তুত

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বুধবার রাতে পিয়ংইয়ং স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। এ সময় তার পাশে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের স্ত্রীসহ আয়োজক কিম জং-উন ও তার স্ত্রী এবং ছোট বোন Ñরয়টাসর্ অনলাইন
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে পিয়ংইয়ংয়ের ইতিবাচক সাড়াকে সুসংবাদ বলে মন্তব্য করেছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই কোরিয়ার শীষর্ নেতাদের মধ্যে বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। আর ২০২১ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়াকে পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে আবারও আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এদিকে, দুই কোরিয়ার সম্পকর্ উন্নয়নের ধারাকে স্বাগত জানিয়েছে চীনও। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, টাইম বুধবার পিয়ংইয়ংয়ে উত্তর কোরিয়ার সবোর্চ্চ নেতা কিম জং-উনের নৈশভোজে অংশ নিয়ে বিভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ নেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের স্ত্রীসহ আয়োজক কিম ও তার স্ত্রী এবং ছোট বোন। ওইদিন সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ের স্টেডিয়ামে বহু মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শারীরিক কসরত ও কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন কিম ও মুন। এর আগে সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার দশের্কর উদ্দেশে বক্তব্য দেন দুই নেতা। তাদের কণ্ঠে ছিল দুই কোরিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা। কিম জং-উন বলেন, ‘উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সুসম্পকের্র জন্য এবারের সম্মেলনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। আমরা বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকের্র মধ্য দিয়ে শান্তি এবং উন্নতির ধারায় যেতে চাই।’ আর মুন জায়ে-ইন বলেন, ‘দুই কোরিয়ার সুন্দর প্রকৃতি, পাহাড়-পবর্ত ও নদী-নালা আজ পরম শান্তির স্থান। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরমাণু অস্ত্রমুক্ত দেশ গড়তে চাই। আমাদের বন্ধন পঁাচ হাজার বছরের পুরোনো। কেবল ৭০ বছর ধরে আমরা আলাদা আছি। এখনই সুযোগ আবারও মিলে যাওয়ার।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার তিনদিনের পিয়ংইয়ং সফর শেষে সিউল ফিরে যান মুন জায়ে-ইন ও তার সফরসঙ্গীরা। তিনদিনের পিয়ংইয়ং সফরে এর আগে মুন উত্তরের নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছেন। ‘আরিরাং গেমস’ নামের যে বিশাল ক্রীড়াশৈলী প্রদশর্নীর অনুষ্ঠানে মুন সাত মিনিটের ভাষণ দিয়েছেন, সেটি উত্তরের সবচেয়ে বড় প্রচারণাধমীর্ আয়োজন। মনোমুগ্ধকর ছন্দোবদ্ধ নৃত্য ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে এ আয়োজনে হাজার হাজার উত্তর কোরীয় তাদের ইতিহাস ও উপকথা তুলে ধরে। চলতি বছর উত্তর কোরিয়া তাদের দেশের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী পালন করেছে। এদিকে, শীষর্ সম্মেলন নিয়ে দুই কোরিয়ার মানুষের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এবারের শীষর্ সম্মেলন। তারা বলেন, ‘শীষর্ সম্মেলনে কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে যে আবহ ছিল, সেটাই সবসময় বজায় থাকুক এমনটাই চাই।’ উত্তর কোরিয়ার অধ্যাপক ওয়াং মো জিন বলেন, ‘কিম জং-উন ও মুন জায়ে-ইনের বৈঠকে যৌথ সামরিক কমিশন গঠন করা, দুই কোরিয়ার সম্পকের্র উন্নয়নে মৈত্রী কাযার্লয় খোলাসহ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে, তার সবই কোরীয় উপদ্বীপকে শান্তির পথে নিয়ে যাবে। হয়তো আলোচনায় পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কতদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে, তা নিয়েও তাদের কথা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বলবো, মুনের সঙ্গে আগের দুইবারের বৈঠকের চেয়ে এবারের বৈঠক অনেক বেশি সফল।’ এদিকে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার ইতিবাচক সাড়াকে সুসংবাদ বলে মন্তব্য করেছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার ওয়াশিংটনে তিনি বলেন, দেশটির এমন পরিবতের্নর কারণেই যুদ্ধাবস্থা দূর হয়ে সুসম্পকর্ গড়ে উঠেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কিম জং-উন আমাকে ইতিবাচক একটি চিঠি লেখেন। এরপরই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। ক্রমেই দেশটি ইতিবাচক অগ্রগতির দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে তাদের বন্দি বিনিময়, কোরীয় যুদ্ধে নিহত সেনা সদস্যদের দেহাবশেষ ফেরত দেয়া থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করাÑ এ সবই ইতিবাচক। এখন তারা অলিম্পিকে অংশ নিতে যাচ্ছে। দেশটির এমন আচরণের পরিবতর্ন সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রচেষ্টায়।’ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তবে এবার প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য ২০২১ সালের সময়সীমা উল্লেখ করেছেন তিনি, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন। গত জুনে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির পর উভয়পক্ষের মধ্যে চলা আলোচনা বেশ কিছুদিনের জন্য থমকে গিয়েছিল। পিয়ংইয়ংয়ে পম্পেওর নিধাির্রত একটি সফর শেষ মুহ‚তের্ বাতিল করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।