রাফাল বোমা ফাটালেন ওলঁাদ বিব্রত মোদি সরকার

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রঁাসোয়া ওলঁাদ
শেষমেশ বোমাটা ফাটালেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রঁাসোয়া ওলঁাদ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের মোদি সরকারই ফরাসি সরকারকে বলেছিল, অনিল অম্বানির ‘রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’কে রাফাল-চুক্তিতে মনোনীত করতে। সংশ্লিষ্ট ফরাসি পত্রিকাটির দাবি, ওলঁাদ তাদের বলেছেন, ‘ভারত সরকার আমাদের ওপর রিলায়্যান্সকে চাপিয়ে দিয়েছিল। আমাদের সামনে কোনো বিকল্প ছিল না।’ এদিকে, ফরাসি সরকারও শুক্রবার রাতে বিবৃতিতে একই কথা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, ‘রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তিতে সহযোগী সংস্থা হিসেবে ভারতের রিলায়্যান্স গ্রæপকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে ফরাসি সরকারের কোনো ভ‚মিকাই ছিল না। আমাদের বলা হয়েছিল, শুধু ওই যুদ্ধবিমানগুলোর গুণগত মান আর সেগুলো যাতে নিধাির্রত সময়ে ভারতের হাতে পেঁৗছায়, তা সুনিশ্চিত করতে।’ এই দুই বিবৃতির পর বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ভারতের মোদি সরকার। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, টাইমস অব ইনডিয়া ফ্রঁাসোয়া ওলঁাদ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই রাফাল চুক্তি হয়। তিনি শুক্রবার যা বলেছেন, ঠিক সেটাই বক্তব্য রেখেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেস সভাপতির দাবি ছিল, যুদ্ধবিমান তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা, বিপুল দেনায় জজির্রত অনিলের সংস্থাকে রাফালে চুক্তির দায়িত্ব দিয়েছেন মোদিই। শনিবার আবারও রাহুলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগত পযাের্য় রাফাল চুক্তির দর-কষাকষি করেছেন। বন্ধ দরজার আড়ালে চুক্তি পাল্টে ফেলেছেন। কংগ্রেস সভাপতি টুইট করেছে, ‘ওলঁাদের মাধ্যমেই আমরা জানলাম, প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি দেউলিয়া অনিল অম্বানিকে পাইয়ে দিয়েছেন। তিনি দেশকে ঠকিয়েছেন। সেনা সদস্যদের রক্তকে অসম্মান করেছেন।’ ওলঁাদ ও ফরাসি সরকারের বিবৃতির পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এতদিন মোদির মন্ত্রীরা অসত্য বলছিলেন? অরুণ জেটলি, নিমর্লা সীতারামনদের মতো অনিলও দাবি করেছেন, রাফাল-নিমার্ণকারী সংস্থা ‘দাসো’র সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তার সংস্থার। সেখানে মোদি সরকারের ভ‚মিকা নেই। কিন্তু সাক্ষাৎকারে ওলঁাদ বলেন, ‘ভারত সরকারই ওই গোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করে। এরপর অম্বানির সঙ্গে বোঝাপড়া করে দাসো। আমরা কাউকে পছন্দ করিনি।’ ২০১৫ সালে ওলঁাদের আমলেই মোদির ফ্রান্স সফরে আচমকা ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি ঘোষণা হয়। পরের বছর ওলঁাদ দিল্লি সফরে গিয়ে সই হয় চুক্তি। ওলঁাদের সঙ্গিনী জুলি গায়েটের সঙ্গে অনিলের প্রযোজনা সংস্থা সিনেমা করছিল বলেও প্রতিবেদন বেরোয়। ওলঁাদ যদিও বলেন, ‘জুলির ছবির সঙ্গে এর সম্পকর্ আছে বলে আমার মনে হয় না।’ কংগ্রেসের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় তিন গুণ বেশি দামে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ৪১ হাজার কোটি রুপি ক্ষতি হয়েছে। বাকি ৯০টি বিমান ভারতে তৈরির অনুমোদন পেয়ে অনিলের সংস্থা কামাতে চলেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি রুপি। এদিকে, ওলঁাদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ হতেই তড়িঘড়ি তা অনুবাদের নিদের্শ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় কমর্কতাের্দর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ‘ভারত বা ফ্রান্স সরকারের এ বিষয়ে কোনো মতামত ছিল না।’ এদিকে, রাফাল যুদ্ধবিমান বানায় যে ফরাসি সংস্থা, সেই ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’র পক্ষ থেকেও একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চুক্তিটি ভারত ও ফ্রান্স এই দুই সরকারের মধ্যে হলেও ‘মেক ইন ইনডিয়া’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সহযোগী সংস্থা হিসেবে ভারতের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে আমরাই বেছে নিয়েছিলাম।’