শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
শক্তিশালী অস্ত্র প্রদর্শনী

ক্ষেপণাস্ত্রের ঝলক দেখাল পিয়ংইয়ং

প্রদর্শনী চলার সময় কিমকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায় পশ্চিমা বিশ্ব বিবেচনা করছে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
উত্তর কোরিয়ার প্রদর্শিত ক্ষেপণাস্ত্র

সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা যায়, এমন নতুন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ঝলক দেখাল উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্রকে 'বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র' বলেও অভিহিত করেছে। বৃহস্পতিবার পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল-সুং চত্বরে হওয়া কুচকাওয়াজে নতুন ধরনের এ ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েকটি দেখানো হয়। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়া কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সামরিক শক্তির এ প্রদর্শনী করল। কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেসে কিম যুক্তরাষ্ট্রকে তার দেশের 'সবচেয়ে বড় শত্রম্ন' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

যদিও এদিনের কুচকাওয়াজে পিয়ংইয়ং তাদের সর্ববৃহৎ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হাজির করেনি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম 'কেসিএনএ'র ছবিতে বৃহস্পতিবারের কুচকাওয়াজে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা যায়, এমন চারটি ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আগে কখনো দেখানো হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে যে নামে ডাকা হচ্ছে, তা উলেস্নখ করে এক টুইট বার্তায় উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বলেন, 'নতুন বছরে নতুন প্রদর্শনী।'

কুচকাওয়াজ দেখার সময় চামড়ার কোট ও পশমের হ্যাট পরা কিমের হাস্যোজ্জ্বল ও হাত নাড়ার ছবিও দিয়েছে কেসিএনএ। গত সপ্তাহে ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেসে কিম উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার সমৃদ্ধ এবং সামরিক বাহিনীর শক্তি আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন সম্প্রতি দেওয়া এক ভাষণে নতুন নতুন সমরাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। তার ঘোষিত অস্ত্রের এ তালিকার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র, যা আরও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, রকেট কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রে বহনযোগ্য বিশালাকৃতির বোমা বা ওয়্যারহেড, গুপ্তচরবৃত্তির জন্য স্যাটেলাইট এবং পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ ইত্যাদি।

বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দেশটির এই সামরিক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব বড় ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।

একই সঙ্গে এই ঘোষণাকে দেখা হচ্ছে কিম জং-উনের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবেও। কারণ এই পরিকল্পনার কথা এমন এক সময়ে ঘোষণা করা হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

এর মধ্যে কিম জং-উন উত্তর কোরিয়ার শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সর্বোচ্চ সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিব পদেও উন্নীত হয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের আগে যখন শোরগোল চলছে তখন কিমের এ ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার বাইরে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার সামরিক পরিকল্পনাকে প্রতিহত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রশাসনের যদি কোনো পরিকল্পনা থাকে তাহলে তাদের উচিত হবে এ বিষয়ে এখনই মনোযোগ দেওয়ার।

কিম জং-উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে মোট তিনবার সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা ও দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন এবং কিমের হুমকিকে তার কি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত? সামরিক অস্ত্র বিশ্লেষক জর্জ হ্যারিস বলেন, 'আমি মনে করি, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের উচিত কিম জং-উনের ঘোষণাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং যত দ্রম্নত সম্ভব তার প্রশাসনের পরিষ্কার করা উচিত, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতা থেকে তারা কী অর্জন করতে চায়।' তিনি আরও বলেন, 'কিম যদি দেখেন, এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, তাহলে তিনি আরও পরীক্ষা ও অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।'

এদিকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'সেন্টার ফর অ্যা নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি'র একজন গবেষক ডোয়েন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথম এগিয়ে আসতে হবে এবং কোনো সমঝোতা হলে তার জন্যও একটা মূল্য দিতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের যে মূল্য দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা থেকে বিরত থাকা। কোনো শর্ত ছাড়াই ওয়াশিংটন এসব করবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে