নিহত ৪২, আহত হাজার

ভয়াবহ ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ

বহু ভবন বিধ্বস্ত, বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ে না ইন্দোনেশিয়ার। সম্প্রতি দেশটিতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর এবার বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ৬.২ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে। তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের সামনে মানুষের জটলা -দ্য ডেইলি টেলিগ্রাম
মাত্র সাত সেকেন্ডের ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ। স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রথম প্রহরে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.২ মাত্রা। কেন্দ্রস্থল ছিল মাজেনি শহর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে, শক্তিশালী কম্পনে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২ জন। আর আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। ভূমিকম্পে শুধু মাজেনি শহরেই ছয় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী প্রদেশ মামুজুতেও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি ইন্দোনেশিয়ার গণমাধ্যমগুলো বলছে, মাঝরাতে মাজেনি শহর কেঁপে উঠলে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমে আসে। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় অনেককে। রাত দেড়টার দিকে ওই ভূমিকম্পের পর কোনো সুনামি সতর্কতা জারি না হলেও আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই ভূমিকম্প এবং পরাঘাতে (আফটার শক) কয়েক জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকায়, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অন্তত ৬০টি ভবন এ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি হোটেল, প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয় এবং একটি শপিং মল রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা প্রাথমিকভাবে মাজেনি শহরে চারজনের মৃতু্য এবং ৬৭৩ জনের আহত হওয়ার খবর দেয়। পরে ধীরে ধীরে আশপাশের এলাকা থেকেও হতাহতের খবর আসতে থাকে। পশ্চিম সুলাওয়েসির দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার প্রধান দারনো মজিদ বলেন, মাজেনি শহর এবং পাশের মামুজু এলাকা মিলিয়ে মোট ২৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকার্মীরা এখনো কাজ করছেন, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেতু মেরামতের পাশাপাশি জরুরিভিত্তিতে তাঁবু, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পশ্চিম সুলাওয়েসির প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র সফরউদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, ধসে পরা ভবনের নিচে চাপা পড়া একটি শিশুকে উদ্ধারের জন্য মানুষ খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছে। বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন অনেকে। তাদেরকেও জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইন্দোনেশিয়ার 'মিটিরিওলজিক্যাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিকস এজেন্সি' এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রকম কয়েক দফা ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে। সামনে আরও শক্তিশালী পরাঘাত আসতে পারে, যা সুনামির শঙ্কাও তৈরি করতে পারে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'মামুজু শহরে বহু ঘরবাড়ি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ভূমিকম্পের আঘাতে বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।' আরেক বাসিন্দা জানান, 'ভূমিকম্প খুবই শক্তিশালী ছিল। চারপাশে কাঁপুনিতে আমরা স্ত্রী-আমি দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই।' উলেস্নখ্য, দ্বীপ দেশ ইন্দোনেশিয়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। ২০১৮ সালে সুলাওয়েসির পালু শহরে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সুনামি দেখা দেয়। ওই ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের মৃতু্য হয়। আর ২০০৪ সালে সুমাত্রায় ৯.১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর যে সুনামি দেখা দিয়েছিল, তাতে ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি শ্রীলংকা, ভারত, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়।