অনিশ্চিতের পথে ট্রাম্পের রাজনীতি

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন তান্ডবে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনীতি থেকে আজীবনের জন্য সরিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠেছে। আর এ দাবি আরও জোরাল হয়েছে তাকে অভিশংসিত করতে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের পর। দেশটির ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মতো সিনেটে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তিনি। গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে বারবার 'ভিত্তিহীন' অভিযোগ তোলার পর পার্লামেন্টে যে তান্ডব হয়েছে, এতে তিনিই উসকানি দিয়েছিলেন, এই অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। উলেস্নখ্য, ওই দাঙ্গায় এক পুলিশসহ প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্পকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, সিনেটররা তাকে ভবিষ্যতে যেকোনো রাজনৈতিক পদ গ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও ভোট দিতে পারবেন। গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় 'ইন্ধন' জোগানোর জন্য অভিযুক্ত করে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ গত বুধবার তাকে অভিশংসিত করে। তবে রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট সহিংসতার পেছনে তার কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিচার প্রক্রিয়া চালাবে। এদিকে, সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, 'প্রেসিডেন্টের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য যেসব নিয়মবিধি ও পদ্ধতি রয়েছে এবং সিনেটের আগের বিচারগুলোর নজির বিবেচনায় নিলে এই বিচারের ফল ন্যায্য বা যথাযথ হওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।' ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে গেলে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন। এর অর্থ হলো ১০০ আসনের উচ্চকক্ষে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকানকে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিতে হবে। এদিকে, ২০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্টের বিচারের পক্ষে খোলাখুলি তাদের মত দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার 'নিউইয়র্ক টাইমস' তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। তবে রিপাবলিকানদের নেতা ম্যাককনেল বলেছেন, তিনি কোন্‌ পক্ষে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ট্রাম্প দোষী প্রমাণিত হলে, সিনেটররা আরেকটি ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তাকে পুনর্বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে কি-না। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। ২০১৯ সালে প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে প্রথমবার অভিশংসিত করেছিল ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মাথা গলানোর অনুরোধ জানানোর অভিযোগে। কিন্তু সিনেট সে সময় তাকে অব্যাহতি দেয়। ট্রাম্প দোষী প্রমাণিত হলে ১৯৫৮ সালে প্রণীত সাবেক প্রেসিডেন্ট সম্পর্কিত ধারা অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্ট যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন; যেমন জনগণের অর্থে অবসর ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ, সেসবও তিনি হারাবেন। ট্রাম্প যদি সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আইনপ্রণেতারা চাইলে আরেকটি ভোট অনুষ্ঠিত করতে পারেন, যা তাকে ২০২৪ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিশ্লেষক অ্যান্থনি জুরকার বলেন, 'এক বছর আগে ট্রাম্পকে যখন প্রথমবার অভিশংসিত করা হয়েছিল, তখন রিপাবলিকান পার্টি ওই পদক্ষেপে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু এবার রক্ষণশীলরা মুষ্টিমেয় সংখ্যায় হলেও এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। যেটা এবারের অভিযোগের গুরুত্বের মাত্রা সম্পর্কে একটা ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরও বলেন, 'অভিশংসনের পক্ষে কিছু রিপাবলিকানের সমর্থন দেওয়াকে মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে ট্রাম্পের প্রভাব কিছুটা কমার একটা প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে জো বাইডেনের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই সিনেটে অভিশংসন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়া একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেখানে করোনাভাইরাস মোকাবিলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তিনি ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে মন দিতে চান, সেখানে অভিশংসনের জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা তার সূচনালগ্নকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।' এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার বাইডেন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতিতে দিয়েছিলেন, এই অভিশংসন প্রক্রিয়া মার্কিনিদের মধ্যে সেই বিভক্তির আগুন আরও জাগিয়ে তুলতে পারে এমন আশঙ্কও রয়েছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ