শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

করোনার নতুন ধরনে বিপদ যুক্তরাষ্ট্রে

আগামী মার্চে শক্তিশালী রূপ নিয়ে তান্ডব চালাতে পারে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরও কাজে লাগাবেন বাইডেন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

করোনার নতুন ধরনে (স্ট্রেইন) বিপদ বাড়ছে ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। আগামী মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী রূপ নিয়ে তান্ডব চালাতে পারে, এমন সতর্কবার্তা দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। মার্কিন রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) শুক্রবার জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহগুলোতে করোনার নতুন রূপ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, এএফপি

মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এই শীতে কোভিড-১৯ এর তীব্রতা বাড়লে সংকটে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও হুমকির সম্মুখীন হবে। এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'তার শপথ নেওয়ার প্রথম ১০০ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবেন স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রবীণরা।'

দেশটির সরকারি সূত্রমতে, এ পর্যন্ত এক কোটি দুই লাখ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু বাইডেন এই পরিসংখ্যানের সমালোচনা করে বলেন, 'অনেক অঙ্গরাজ্যে তিন কোটি মার্কিনিকে টিকা দেওয়া হয়েছে।' শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "মনে রাখতে হবে আমরা এখন 'গভীর শীতে' রয়েছি। তবে এই শীত চলে যাওয়ার আগেই করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।"

মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন স্ট্রেইন আরও ছড়িয়ে পড়বে। মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক গবেষণায় এসেছে, বর্তমানে দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলে আগের স্ট্রেইনের চেয়ে ৩০ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রমণযোগ্য। তবে নতুন ধরনের সংক্রমণে মানুষ আরও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবেষণায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় এখনকার ভ্যাকসিন নাও কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি অঙ্গরাজ্যের ৭৬ জনের শরীরে নতুন ধরনের করোনা অস্তিত্ব মেলেছে, যা যুক্তরাজ্যের ধরনের সঙ্গে মিল রয়েছে। যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল ও পর্তুগালসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরও

কাজে লাগাবেন বাইডেন

অন্যদিকে, করোনার টিকাদান কর্মসূচিকে আরও বেগবান করে তুলতে চান নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে লক্ষ্যে সিরিঞ্জসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার এমন ঘোষণা দেন বাইডেন।

বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেডারেল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মীরা কয়েক হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবেন। সেখানে শিক্ষক, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রয়কর্মী, ৬৫ বছর বেশি বয়স্ক মানুষ এবং টিকার বর্তমান তালিকায় না থাকা অন্যদের টিকাদানের বিষয়টি পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করবেন অবসরে যাওয়া চিকিৎসকরা।

পাশাপাশি ভ্যাকসিন বিতরণে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জামের (গস্নাস ভায়াল, সুঁই, সিরিঞ্জ ইত্যাদি) উৎপাদন বাড়াতে ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্টেরও শরণাপন্ন হওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বাইডেনের। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্যও আইনের সহায়তা নেবেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, যেসব কোম্পানি এ কাজে সরকারকে সহায়তা করতে ইচ্ছুক, এরই মধ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

ফেব্রম্নয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য

পাঁচ লাখে পৌঁছাবে!

এদিকে, আগামী ফেব্রম্নয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখে পৌঁছাতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের 'চিফ অব স্টাফ' রন ক্লেইন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

২০১৯ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনার প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ বিশ্বজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রম্নত বাড়ছে। এরই মধ্যে করোনার টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।

জরিপ সংস্থা 'ওয়াল্ডোমিটারস'র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই মহামারিতে মারা গেছে চার লাখ এক হাজার ৮৫৬ জন। সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যাও সেখানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে দুই কোটি ৪১ লাখ দুই হাজার ৪২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে এক কোটি ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৯ জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে