আজকের যায়যায়দিন

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন রেকর্ডের 'বরপুত্র'। ইতিবাচক হোক আর নেতিবাচক, রেকর্ড যেন তার নিত্যসঙ্গী। মিথ্যা কথা বলার রেকর্ড, টুইটবার্তার রেকর্ডের মতো আরও অসংখ্য রেকর্ড গড়ার পর এবার হোয়াইট হাউস ছাড়ার ক্ষেত্রেও রেকর্ড গড়লেন তিনি। সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা নিয়ে আজ হোয়াইট হাউস ছাড়তে যাচ্ছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদসূত্র : বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা

দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির জো বাইডেন। সে অর্থে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের মুহূর্ত একেবারেই ঘনিয়ে এসেছে। আজই চার বছরের ক্ষমতার দাপট শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়বেন তিনি।

কিন্তু হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ট্রাম্প কী পেলেন, আর দেশকেই বা কী দিয়ে গেলেন, সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। চার বছরের শাসনামলে ট্রাম্প তার কর্মকান্ডের কারণে প্রতিনিয়তই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তার কথা, কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ ছিল না। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে তার চিন্তা থেকে এক চুলও সরাতে পারেনি। তার যখন যা মনে হয়েছে, তিনি তাই করেছেন। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছু বিষয়ে যে সীমাবদ্ধতা থাকে, সেটা মানতে নারাজ ছিলেন তিনি।

এমনকি এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও তিনি কম বিতর্কের জন্ম দেননি। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পুনরায় ভোট গণনার জন্য মামলা করেন। যদিও ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণই তিনি দেখাতে পারেননি। নিজের পরাজয়কে তিনি মানতেই পারছিলেন না। আর বাইডেনকে জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও গড়িমসি করেছেন।

ইউক্রেন ও ইসরাইলকে সহায়তা বিল মার্কিন সিনেটে অনুমোদন

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরই দেখা গেছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ভোটে বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি মোট ভোটেও বাইডেন তার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। এদিকে এক জরিপ বলছে, দেশটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন জনপ্রিয়তা নিয়ে আজ হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন ট্রাম্প।

সোমবার 'গ্যালাপ' নামের একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ট্রাম্প যা কিছু করেছেন, সে বিষয়ে তারা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত।

গ্যালাপের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন তার জনপ্রিয়তা ছিল ৪১ শতাংশ। অন্যান্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে এই সংখ্যা কিছুটা কম। এছাড়া ক্ষমতার একেবারে শেষ মুহূর্তে তার জনপ্রিয়তা আরও কমে গেছে। বিশেষ করে গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতার ঘটনার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ট্রাম্প বেশ সমালোচিত হয়েছেন। এতে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। অন্যদিকে, ক্ষমতায় থাকাকালীন এ পর্যন্ত ট্রাম্পকে দুইবার অভিশংসিত হতে হয়েছে, যা এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘটেনি।

গত ৪ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে এই জরিপটি করা হয়েছে। জরিপেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

আজ বাইডেনের শপথ গ্রহণের দিন সকালেই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিন সকালে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে ফ্লোরিডা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এর আগে অভিষেকের একদিন আগে, অর্থাৎ মঙ্গলবারই ওয়াশিংটন ছাড়ার চিন্তা করেছিলেন। পরে মত পাল্টে আজ সকালে ফ্লোরিডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফলে গত দেড় শতাব্দি ধরে তিনিই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পরবর্তী উত্তরসূরির শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এদিন সকালেই ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে যাবেন ট্রাম্প। এটা ট্রাম্পের বৈধ আবাসস্থল। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর সেখানেই থাকবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে সরাসরি ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলেন তিনি। এরপর তারই উসকানিতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে অনুসারীরা হামলা চালায়।

ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্বের অনেকে এই হামলায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যার কারণে মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ 'হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে' (প্রতিনিধি পরিষদ) দ্বিতীয়বারের মতো ইমপিচ বা অভিশংসিত হন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।