বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতে কৃষক আন্দোলন

কৃষি আইন দেড় বছর স্থগিত রাখতে চান মোদি

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

কৃষক আন্দোলনের চাপে অবশেষে পিছু হঠতে বাধ্য হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সরকারের প্রস্তাব, তারা দেড় বছর তিন বিতর্কিত কৃষি আইন স্থগিত রাখবে। কৃষক নেতারা চাইলে সুপ্রিম কোর্টে লিখিত হলফনামা দিতেও সরকার রাজি। বিনিময়ে কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হবে। সংবাদসূত্র : পিটিআই, এএনআই, ডিডবিস্নউ নিউজ

কৃষক সংগঠনগুলোও এই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেনি। তারা এখন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক সেরে শুক্রবার আবার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। তখন তারা সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবেন। কৃষকরা এখনো যে দাবি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, তা হলো, ফসলের নূ্যনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন করা। যাতে সবাই এই সহায়ক মূল্য মানতে বাধ্য হয়।

কৃষকদের দাবি ছিল, তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। কিন্তু সরকার এতদিন ধরে রাজি হয়নি। বরং তারা অনড় থেকে যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল, এই দাবি মানা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি অসংখ্যবার জানিয়েছেন, তিনটি আইন কৃষকদের প্রভূত উপকার করবে। বিরোধীরা যা বলছে, তা ঠিক নয়। বিজেপির তরফেও বারবার একই কথা প্রচার করা হচ্ছিল। এমনকি ভারতের কৃষকদের একটা বড় অংশ যে কৃষি বিলের সমর্থনে, সে কথাও বলা হচ্ছিল। কিন্তু কৃষকরাও এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি হননি। তারা নিজেদের দাবিতে নিয়ে অনড় থেকেছেন। অবশেষে সরকার দেড় বছরের জন্য কৃষি আইন স্থগিত রাখতে রাজি হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, পুরোপুরি বাতিল না করে, দেড় বছরের জন্য কেন স্থগিত রাখা হবে এই বিতর্কিত আইন? সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, কৃষকদের বিষয়টি বোঝানো হবে। কিছু পরিবর্তন করে নতুন আইন চালু করতে তারা রাজি হলে, তখন আবার আইন চালু হতে পারে। সেজন্য একেবারে বাতিল না করে আইনটি দেড় বছরের জন্য স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। তাতে করপোরেটদেরও বার্তা দেয়া সম্ভব হলো।

সিপিএমের কৃষক নেতা ও এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হান্নান মোলস্না বলেছেন, 'সংগঠনগুলো আলোচনায় বসেছে। তারা এখন সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্ত সরকারকে জানানো হবে।'

কৃষকদের সামনে তিনটি বিকল্প আছে। এক, সরকারের এই প্রস্তাবও খারিজ করে দেয়া। দুই, এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া। তিন, এই প্রস্তাব মেনে আরও কিছু দাবি মানার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা। যার মধ্যে অন্যতম হলো এমএসপির দাবি। স্বরাজ পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদবের মতে, এমএসপির দাবি রাজনৈতিক ও আর্থিক দিক থেকে মানা সম্ভব। তবে এর জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি দরকার।

গত প্রায় দুই মাস ধরে কৃষকরা দিলিস্নর সীমানায় আন্দোলন করছেন। তাদের ঠেকাতে সরকার কম চেষ্টা করেনি। তাদের দিলিস্নর সীমানায় আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। জলকামান, লাঠি চালানো হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ৬০ জনের বেশি কৃষক হয় মারা গেছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। এই আন্দোলন এখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়েছে। আর ভারতে যেহেতু প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল, তাই কৃষকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে তাদের তুলে দিতে পারেনি মোদি সরকার। কৃষকদের রাগ কতটা, তা হরিয়ানা, পাঞ্জাবে বোঝা গেছে। হরিয়ানায় কৃষকরা মুখ্যমন্ত্রীকে জনসভা পর্যন্ত করতে দেয়নি। ফলে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন মোদি ও বিজেপি। সেজন্যই পিছিয়ে এলো মোদি সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে