দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবহর

চীন-তাইওয়ান বিবাদ, আসরে যুক্তরাষ্ট্র

বাইডেন জমানার শুরুতেই ওয়াশিংটন-বেইজিং ঘিরে নতুন অশান্তির শঙ্কা তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনা যুদ্ধবিমানের 'অনুপ্রবেশ'

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চিরবৈরী চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে নতুন করে আবারও উত্তেজনার পারদ চড়েছে। আর এরই মধ্যে তাইওয়ানকে সমর্থন দিয়ে আসরে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রও। এতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্বগ্রহণের শুরুতেই ওয়াশিংটন-বেইজিং ঘিরে নতুন করে অশান্তির আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। শনিবার মার্কিন বিমানবাহী রণতরী 'ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট'র নেতৃত্বে একটি নৌবহর দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতে, তাইওয়ান ইসু্যতে চীনকে চাপে রাখতেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন উদ্যোগ। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা যদিও 'সমুদ্রের স্বাধীনতার' প্রতি জোর দিতে এই অপারেশন চালানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের নৌবহর প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়, নৌবহরটি দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থান করছিল। এই সাগরের বড় অংশই চীন নিজেদের বলে দাবি করে। বিবৃতিতে বলা হয়, 'সাগরের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে ও সমুদ্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্ব বিনির্মাণে' এই নিয়মিত অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে। নৌবহরের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ডগ ভেরিসিমো বলেন, 'সমুদ্রে আমার ৩০ বছরের নাবিকের অভিজ্ঞতায় দক্ষিণ চীন সাগর আবার দেখতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ছিল।' জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নৌবহরের কমান্ডারের কাছ থেকে এই বিবৃতি এলো। মঙ্গলবার বাইডেনের মনোনীত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে।' চীন বারবার দাবি করে আসছে, মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের অধিকৃত দ্বীপগুলোর কাছাকাছি চলে আসছে। এই অঞ্চলের জলসীমা নিয়ে চীনসহ ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রম্ননেই ও তাইওয়ানের মধ্যেও বিবাদ রয়েছে। থিওডোর রুজভেল্ট রণতরীর সঙ্গে নৌবহরে টিকনডেরোগা শ্রেণির মিসাইল বহনকারী জাহাজ 'ইউএসএস বাংকার হিল', আরলেইঘ বার্ক শ্রেণির মিসাইল বিধ্বংসী জাহাজ 'ইউএসএস রাসেল' এবং 'ইউএসএস জন ফিন' ছিল বলে বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়েছে। সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জানানোর পর থেকে চীনের উদ্বেগ বেড়ে গেছে। গত বছর ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাইওয়ানের বিমানে চড়ে পরিদর্শনকালে তাইওয়ান জলপ্রণালির সীমারেখার কিছুটা ভেতরে ঢুকে পড়ে। বেসরকারিভাবে এটি চীন ও তাইওয়ানের নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, তাইওয়ানের ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধে চীনের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দ্বীপটিকে দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি নিশ্চিত করে মিত্রতা আরও গভীর করবে তারা। এসব নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীন কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে চীন জানিয়েছিল, তারা তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মহড়া পরিচালনা করছে। তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনা যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশ এদিকে, চীনের আটটি বোমারু ও চারটি ফাইটার জেট বিমান তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমের বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে শনিবার 'অনুপ্রবেশ' করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে চীন। গত কয়েক মাসে প্রায় প্রতিদিন তাইওয়ানের দক্ষিণাংশে ও তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত প্রাটাস দ্বীপপুঞ্জের জলসীমার আকাশে চীনা বিমান প্রবেশ করেছে। তবে সেগুলো ছিল একটি বা দুটি পর্যবেক্ষক বিমান। কিন্তু এবারের বহরে প্রায় ১২টি যুদ্ধবিমান ছিল বলে জানিয়েছে তাইওয়ান। শনিবার এতগুলো যুদ্ধবিমানের 'অনুপ্রবেশ' বেশ বিরল ঘটনা বলে জানিয়েছে তাইওয়ান। বিমানগুলোর মধ্যে ছিল পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম আটটি এইচ-সিক্সকে বোমারু বিমান ও চারটি জে-সিক্সটিন ফাইটার জেট। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে চীনা বিমানগুলোর উড়ে যাওয়ার পথ দেখানো হয়েছে। মানচিত্রে চীনের ওয়াই-এইট অ্যান্টি-সাবমেরিন বিমানের গতিপথও দেখানো হয়েছে, যা সর্বশেষ অনুপ্রবেশকারী বিমানের একই জলসীমার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাইওয়ানের বিমানবাহিনী চীনের বিমানগুলোকে সতর্ক করেছে এবং এগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য মিসাইল বসিয়েছে। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, 'যুদ্ধবিমানগুলো সতর্ক অবস্থায় ছিল, রেডিও সতর্কতা জানানো হয় ও প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমগুলো মোতায়েন করে তাদের তৎপরতার ওপর নজর রাখা হয়।'