বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘস্থায়ী হবে ট্রাম্পের প্রভাব

ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু প্রশাসন ও প্রচারের ক্ষেত্রে কীভাবে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করতে হয়, ট্রাম্প তা দেখিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন...
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘটনাবহুল চার বছর শেষ হয়েছে গত ২০ জানুয়ারি। কিন্তু তার এই চার বছরের শাসনকাল নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে এবং হবে। হয়ত দশকজুড়ে হবে। তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর থেকেই তার প্রশাসনকে একের পর এক বিতর্ক ও কেলেঙ্কারি সামলাতে হয়েছে। করোনা মহামারি নিয়ে তিনি চটজলদি ব্যবস্থা নেননি। পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে সহিংসতা নিয়ে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারপর হয়েছেন দ্বিতীয়বার অভিশংসন। গত চার বছর ধরে তিনি কী করেছেন, এসব বিতর্ক হয়ত আপাতত সেই বিষয়টি ঢেকে দিতে পারে।

গত চার বছরে ট্রাম্পের শাসন, তার উত্তরাধিকার দুটি সম্পূর্ণ আলাদা লেন্স থেকে দেখা যেতে পারে। একটি হলো রক্ষণশীল, বড়লোক ব্যবসায়ী এবং ধর্মীয় দক্ষিণপন্থিদের মতামত। তারা বলবেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মহান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক যে ট্রাম্পের শাসনকে খুব ভালোভাবে দেখে না, তা 'পিউ রিসার্চ পোল'র ফল থেকে বোঝা যাচ্ছে।

ট্রাম্প মাত্র ২৯ শতাংশ 'অ্যাপ্রম্নভাল রেটিং' (গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা) নিয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, তিনি ২০১৬ সালে যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন, তার অনেকগুলোই দ্রম্নত রূপায়ণ করেছেন এবং পুরো ব্যবস্থাকে ঝাঁকিয়ে দিতে পেরেছেন।

মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন

ফেডারেল বিচার ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাম্প যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই উত্তরাধিকার দীর্ঘস্থায়ী হবে। ভালো হোক বা খারাপ হোক, তার প্রভাব আগামী প্রজন্মের ওপর পড়বে।

তিনি সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করেছেন, যার ফলে সর্বোচ্চ আদালতের রক্ষণশীল ঝোঁক তীব্র হবে এবং যার প্রভাব এলজিবিটি (পুরুষ সমকামী), স্বাস্থ্য, ইমিগ্রেশন, শ্রমনীতি, রিপ্রোডাকটিভ রাইটসের (জন্মদানের অধিকার) ওপর পড়বে। ট্রাম্প ফেডারেল কোর্টের ২০০ জন বিচারক নিয়োগ করেছেন, যারা রিপাবলিকান ও রক্ষণশীলদের পক্ষে রায় দেবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'গেস্নাবাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট'র অধ্যাপক ও রিসার্চ ডিরেক্টর মাইকেল কর্নফিল্ড জানিয়েছেন, 'তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করার আগে ট্রাম্প ধর্মীয় রক্ষণশীল ও রিপাবলিকান পার্টির এলিটদের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছিলেন।'

২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুসারে, সার্কিট বিচারকের প্রতি চারজনের মধ্যে একজনকে ট্রাম্প নিয়োগ করেছেন। তিনি সেখানে মতাদর্শগতভাবে অতি রক্ষণশীলদেরই নিয়োগ করেছেন। সেটাই তার নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি ছিল।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বছরেই ট্রাম্প করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ করেছিলেন। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও তিনি কর কমিয়েছিলেন, তবে সেটা ছিল সাময়িক এবং কর কমানোর হারও ছিল খুবই কম। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তে মার্কিন ধনীরা বিপুলভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। বাড়তি অর্থ তারা অবশ্য শেয়ার বাজারে লাগিয়েছেন, তা দিয়ে অবশ্য কর্মীদের বেতন বাড়াননি।

কংগ্রেসের বাজেট অফিসের মতে, কর ছাড়ের ফলে ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি হবে এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ান ডলার। ট্রাম্প সমালোচকদের মতে, এর ফলে বিপাকে পড়বে কম আয়ের মানুষ। কারণ, এই ঘাটতি মোকাবিলায় রক্ষণশীলরা সামাজিক নিরাপত্তায় অর্থ কম করার দাবি তুলবে।

বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে আবার আলোচনা

ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার একটা কারণ হলো, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য দেশের যে বাণিজ্যিক চুক্তি আছে, তা বাতিল করা বা বদল করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন। তিনি সেটা করেছেনও। অনেক সময় অবশ্য বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। চীনের সঙ্গে তিনি বাণিজ্যিক যুদ্ধই শুরু করে দিয়েছিলেন। অনেক সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিল ক্লিনটনের সময় 'নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট' (নাফটা) বাতিল করে আলোচনা করে নতুন চুক্তি করতে পেরেছিলেন। তার সমালোচকরাও মেনে নিয়েছিলেন, নতুন চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো।

ট্রাম্প বলেছিলেন, নাফটা হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ বাণিজ্যিক চুক্তি। তার বদলে তিনি মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছেন।

ট্রাম্পের কট্টর বিরোধী ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের (প্রতিনিধি পরিষদ) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ২০১৯ সালে বলেছিলেন, নতুন বাণিজ্য চুক্তি যে নাফটার থেকে ভালো, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্যের খতিয়ান তার নীতির ভিত্তিতে করা হয় না, বরং তা কীভাবে মার্কিনিদের সুবিধা করে দিয়েছে এবং বাকি বিশ্বের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতেই করা হয়।

ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতি অনেক সময়ই ধোঁয়াটে ছিল। কিন্তু তিনি এই নীতি দিয়ে বাকি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। ২০১৫ সালে সংবাদপত্রের নিবন্ধে ওবামার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যিক নীতির তুমুল সমালোচনা করে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে আমেরিকা আবার জয়ীর আসনে বসবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ট্রাম্পের শাসন করার রীতি ছিল প্রথার বাইরে এবং তা নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা যেত না।

ট্রাম্পের নীতি সত্যিই সে রকম ছিল। তিনি ২০১৭ সালে প্যারিসের 'ক্লাইমেট এগ্রিমেন্ট' (জলবায়ু চুক্তি) থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যায্য। তিনি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকেও বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করতে চেয়েছিলেন।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার

ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ও প্রচারের ক্ষেত্রে কীভাবে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করতে হয়, ট্রাম্প তা দেখিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন, প্রশাসনিক বদলের কথা ঘোষণা করেছেন, নিজের অনুগামীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি ছিলেন 'টুইটার-ইন-চিফ'।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কমিউনিকেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর (পরিচালক) জেসন মলিকা বলেন, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ওবামা প্রথাগতভাবে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প দেখিয়ে দিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কে তিনি কী ভাবেন। সংবাদসূত্র : ডিডবিস্নউ নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে