কুচকাওয়াজে হামলা

রক্তক্ষয়ী ও অভাবনীয় প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি ইরানের

আয়নায় মুখ দেখতে বলল যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনের আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে বলতে এসেছি : নিউইয়কের্ রুহানি

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডন্ট হাসান রুহানি
ইরানের আহভাজে সামরিক কুচকাওয়াজে সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জড়িত থাকার অভিযোগ করে দেশ দুটির বিরুদ্ধে ‘রক্তক্ষয়ী ও অভাবনীয়’ প্রতিশোধ নেয়ার হুমকির কথা জানিয়েছে ইরান। প্রতিশোধ নেয়ার এই হুমকি দিয়েছে দেশটির রেভ্যুলিউশনারি গাডর্ বাহিনীর উপ-প্রধান হোসেইন সালামি। গত শনিবারের এই হত্যাযজ্ঞের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকেও দায়ী করেছেন ইরানের নেতারা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, সিএনএন শনিবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজের ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে এক শিশুসহ ইরানের প্রভাবশালী রেভ্যুলিউশনারী গাডর্ বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছেন। পরে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরোধে ওই চার হামলাকারীও নিহত হয়। ইরানের অভিজাত এই বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের হামলা এটি। যুক্তরাষ্ট্র ও এর আরব মিত্র দেশগুলো ইরানকে একঘরে করার চেষ্টা চালানোর সময়টিতেই সেখানে এমন হামলা হলো। রোববার এক বক্তব্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও কুচকাওয়াজে হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও এর আরব মিত্র দেশগুলোকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। নিউইয়কের্ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তেহরান ছেড়ে যাওয়ার আগে রুহানি যুক্তরাষ্ট্রের সমথর্নপুষ্ট আরব দেশগুলোকে দোষারোপ করে বলেন, তারা ইরানে সরকারবিরোধী জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে অথৈর্নতিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাদবাকি বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে... এ রকম পশুপ্রবৃত্তির মধ্য দিয়ে তারা কাযর্ সমাধা করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু আমাদের জনগণ এবং সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আমরা এই পরিস্থিতিকে (নিষেধাজ্ঞা) জয় করে নিতে পারব। আর আমেরিকা তখন ভুল পথ বেছে নেয়ার জন্য পস্তাবে।’ এর আগে কুচকাওয়াজে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আর মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের দায়ী করলেন ইরানের সবোর্চ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি বলেছেন, ইরানকে অনিরাপদ করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের পুতুল সরকারগুলোর ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় আহভাজে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে রেভ্যুলিউশনারি গাডর্ বলেছে, হামলার বদলায় অচিরেই তাদের ওপর এমন প্রাণঘাতী আঘাত হানা হবে, যেটা তারা ভুলতে পারবে না। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হোসেইন সালামি বলেন, ‘আপনারা আমাদের প্রতিশোধ নেয়া অতীতে দেখেছেন। আপনারা মনে রাখুন, আমাদের প্রতিশোধ হবে রক্তক্ষয়ী ও অভাবনীয়। যা করেছেন, সেটার জন্য আপনাদের অনুশোচনায় পড়তে হবে।’ দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান মাহমুদ আলাভি জানান, হামলায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইরানকে ‘আয়নায় মুখ দেখতে’ বলল যুক্তরাষ্ট্র এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ‘যেকোনো সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা জানায়। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেছেন, অন্যদের দোষারোপ না করে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উচিত আয়নায় নিজের মুখ দেখা। রুহানি নিজের দেশের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন দাবি করে হ্যালি বলেছেন, ওই হামলার উৎস খুঁজতে ইরানি প্রেসিডেন্টের উচিত তার নিজের ঘরের আশপাশে খেঁাজ করা। তিনি বলেন, ইরানে প্রবেশ করা প্রতি আউন্স অথর্ তার সামরিক বাহিনীতে যায়, দীঘির্দন ধরে নিজের জনগণকে দমন করে রেখেছেন তিনি। ওইসব (হামলা) কোথা থেকে আসে, সেটা বের করতে নিজের ভিত্তির দিকে তাকানো দরকার তার। যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে বলতে এসেছি : নিউইয়কের্ রুহানি আর নিউইয়কের্ পেঁৗছানোর পর প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক আন্তজাির্তক আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো জাতিসংঘে তুলে ধরবেন তিনি। সেই সঙ্গে ইরানের আঞ্চলিক ও আন্তজাির্তক নীতি সম্পকের্ও ব্যাখ্যা দেবেন। রুহানি নিউইয়কের্র জন এফ কেনেডি আন্তজাির্তক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি বছরের অধিবেশনের সঙ্গে আগের বছরগুলোর অধিবেশনের কিছুটা পাথর্ক্য থাকবে। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, যার আলামত এবারের অধিবেশনে প্রকাশ পাবে। এবারের নিউইয়কর্ সফরে প্রেসিডেন্ট রুহানি জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেয়া ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বণর্বাদবিরোধী প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনেও বক্তব্য রাখবেন। মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও তার বৈঠক হতে পারে।