মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
সাংবাদিক খাশোগি হত্যা

স্বার্থ রক্ষায় সৌদি যুবরাজকে ছাড় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

হ বিচ্ছেদ নয়, সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে চোখ যুক্তরাষ্ট্রের, মন্তব্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের হ সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলা
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরাসরি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এলেও তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠার পর নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সাফাই গেয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। মার্কিন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি স্বীকার করেছেন, 'জাতীয় স্বার্থ' রক্ষার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, বিবিসি, এএফপি

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসু্যলেটে খাশোগিকে হত্যা করে যুবরাজের গুপ্তচররা। পরে তার শরীর কেটে টুকরা টুকরা করে রাসায়নিক দিয়ে গলিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় যুবরাজকে দায়ী করে গত শুক্রবার গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। ৩৫ বছর বয়সী 'এমবিএস'কে শাস্তির আওতায় না রাখলেও ৭৬ সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, 'যুবরাজকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, এমন দেশের সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, 'গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান এবং রিয়াদের ওপর আসা হুমকি ও রকেট হামলা থেকে সুরক্ষা দেওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যখন প্রয়োজন, তখন দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে বৈশ্বিক কূটনীতি দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থও কাজ করছে।'

জেন সাকি বলেন, 'আমরা মনে করি, খাশোগি হত্যার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর উপায় রয়েছে। আর সৌদি আরবের সঙ্গে যেহেতু আমাদের চুক্তি রয়েছে, সে কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারও রয়েছে। আসলে কূটনীতি ব্যাপারটা এমনই হয়।'

বিচ্ছেদ নয়, সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে চোখ

যুক্তরাষ্ট্রের : পররাষ্ট্র দপ্তর

এদিকে, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেওয়ায় অভিযুক্ত সৌদি যুবরাজ ও দেশটির প্রকৃত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে উলেস্নখ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও।

অভিযোগ থাকার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা।' তিনি বলেন, 'সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে বিচ্ছেদ নয়, পুনরুদ্ধারের কাজ করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন।' তার মতে, বাইডেন প্রশাসন যদি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো নাটকীয় এবং কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা (নিষেধাজ্ঞা) রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, নির্দোষ ও নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার আদেশ দেওয়ার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'ওয়াশিংটন পোস্ট'র প্রকাশক ফ্রেড রিয়ান। এই পত্রিকাতেই কলাম লেখক হিসেবে কাজ করতেন খাশোগি।

তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই হত্যাকান্ডের জন্য সৌদি আরবকে 'চরম মূল্য পরিশোধ' করতে হবে বলে বাইডেন মন্তব্য করলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র আসলে দেশটির যুবরাজকে 'ওয়ান ফ্রি মার্ডার পাস' দিচ্ছে।

এর আগে ওই হত্যাকান্ডের বিষয়ে গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফ্রেড রিয়ান বলেছিলেন, 'নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার দিন থেকেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। একটি হচ্ছে, সত্য সামনে তুলে ধরা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।' সে সময় তিনি আরও বলেছিলেন, 'হত্যাকান্ডের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে সত্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন, যে লোকটা এই হত্যাকান্ড ঘটানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন; তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।'

অবশ্য যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও খাশোগি ইসু্যতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। দেশটির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া দেশটির রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। তবে খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই বাহিনী।

সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলা

অন্যদিকে, সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন 'রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস' (আরএসএফ) জার্মানির একটি আদালতে এই মামলা করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে