মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন

ফের হামলা আতঙ্ক, স্থগিত কংগ্রেসের অধিবেশন

হ সক্রিয় ক্যাপিটল পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হ নজিরবিহীন হামলার দুই মাস না পেরোতেই আবারও এমন আশঙ্কা

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ক্যাপিটল ভবনের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক পার্লামেন্ট ভবন 'ক্যাপিটল হিলে' আবারও হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভবনের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় এই হামলা হতে পারে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ক্যাপিটল পুলিশ। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলার কোনো খকবর পাওয়া যায়নি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ক্যাপিটল ভবনে সবচেয়ে বড় হামলার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ফের হামলার আশঙ্কায় দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। হামলার আশঙ্কা এবং আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কংগ্রেসের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন গণমাধ্যম। তবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের কার্যক্রম যথারীতি চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, অজ্ঞাত চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী ৪ মার্চ অথবা ওই সময়ের দিকে ক্যাপিটলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে গত ফেব্রম্নয়ারির শেষদিকে আলোচনা করছিল। এতে অংশগ্রহণের জন্য হাজার হাজার মানুষকে ওয়াশিংটন ডিসি যেতে অনুপ্রাণিত করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলছিল তারা। এদিকে, হামলার তথ্য পাওয়ার পরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ক্যাপিটল পুলিশ। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, 'ক্যাপিটল ভবনের ওপরে হামলার যেকোনো হুমকি বানচাল করতে স্থানীয়, প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি আমরা। (হামলার বিষয়ে পাওয়া) গোয়েন্দা তথ্যকে আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন অবকাঠামো মোতায়েনসহ অতিরিক্ত জনবলও আনা হয়েছে।' বিবৃতিতে ক্যাপিটল পুলিশ আরও জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ক্যাপিটলে হামলা চলাতে পারে; এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত অনলাইনে নিজেদের মধ্যে আলাপে হামলার বিষয়ে আলোচনা করেছে। বুধবার সিনেটের এক শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান মেলিসা স্মিস্স্নোভা বলেন, '৪ ও ৬ মার্চ নিয়ে উগ্রবাদীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।' উগ্র ডানপন্থি 'কিউঅ্যানন' তত্ত্বের বিশ্বাসীদের কাছে ৪ মার্চ তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৯৩৩ সালে মার্কিন সংবিধানের ২০তম সংশোধনীর আগে প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেস সদস্যরা এই দিনটিতেই অফিসের দায়িত্বভার গ্রহণ করতেন। ৪ মার্চ নিয়ে কিউঅ্যাননদের অনলাইনে আলোচনার বিষয়ে খবর রয়েছে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে। তবে তারাই ওই দিনে সহিংসতা করবে এমন সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন এক এফবিআই কর্মকর্তা। গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যৌথ অধিবেশন বসেছিল কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) এবং উচ্চকক্ষ সিনেট সদস্যদের। অধিবেশন চলাকালে সেখানে হামলা করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার উন্মত্ত সমর্থক। ওই দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জন। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে হওয়া এই হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের উসকানি ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি এই অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেও সিনেটে চূড়ান্ত অভিশংসনের হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর সমালোচনার মুখে ক্যাপিটল পুলিশের প্রধান পদত্যাগ করেছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটদের অভিযোগ ছিল, নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে ট্রাম্প একের পর এক প্রমাণহীন অভিযোগ দিতে থাকেন। কিন্তু তার ওই অভিযোগ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। তারপর কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের সময় ক্যাপিটল ভবনে যেতে সমর্থকদের উসকানি দিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির কথা শুনে সমর্থকরা আগে থেকেই উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল হামলার উসকানি। এ কারণেই ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে ট্রাম্প সমর্থকরা। এছাড়া ফেব্রম্নয়ারির শেষের দিকে ক্যাপিটল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইয়োগোনাদা পিটম্যান কংগ্রেসে বলেন, 'জানুয়ারির ৬ তারিখে ক্যাপিটলে হামলার পেছনে ট্রাম্পের সমর্থকরাই ছিল। হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল- ক্যাপিটল ভবন উড়িয়ে দেওয়া এবং আইনপ্রণেতাদের হত্যা করা।'