কোভিড-১৯ বিল পাস

প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ জয় বাইডেনের

এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এটির প্রয়োজন ছিল, মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন, অবশেষে তা আলোর মুখ দেখলো। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির সিনেটে এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের কোভিড-১৯ বিল পাস হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়ে তিনি বড় চ্যালেঞ্জগুলোর প্রথমটির জয় পেলেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ সহায়তা প্যাকেজ পাস হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাইডেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন নাগরিকদের সহায়তার জন্য এই প্যাকেজ খুবই প্রয়োজন ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে সিনেট এক বৃহৎ সেবার নজির রাখল।' তিনি আরও বলেন, '৪৫ দিন আগে জনগণের কাছে তাদের দুঃসময়ে সহায়তার যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলাম, আজ (শনিবার) তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।' এছাড়া এদিন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ অন্য সিনেটরদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমারের-ও প্রশংসা করেন। সিনেটে এই বিল পাস হওয়ায় জনগণকে সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে 'আরও একটি বৃহৎ পদক্ষেপ' বলে বর্ণনা করে বাইডেন আরও বলেন, 'চলতি মাসেই মার্কিন নাগরিকদের হাতে সহায়তার চেক চলে যাবে।' স্থানীয় সময় শনিবার মার্কিন সিনেটে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবিত করোনা প্যাকেজ নিয়ে ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ৫০টি আর বিপক্ষে ৪৯টি ভোট পড়ে। সিনেটের প্রত্যেক ডেমোক্রেট সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন। অন্যদিকে সব রিপাবলিকান এর বিরোধিতা করেন। রিপাবলিকানরা বাইডেনের পরিকল্পনার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আকারের নতুন একটি ত্রাণ প্রস্তাবের দাবি তুলেছিলেন। জানুয়ারিতে জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনের উপনির্বাচনে জয় পাওয়ায় সামান্য ব্যবধানে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের নিয়ন্ত্রণ এখন ডেমোক্রেটদের হাতে, আর এ কারণেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে জয় পেলেন বাইডেন। বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে প্রত্যেক মার্কিনিকে সরাসরি দেওয়া হবে এক হাজার ৪০০ ডলার করে। এছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৪১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়া হবে ৪৪ হাজার কোটি ডলার। বিলে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি এবং করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার গতি আরও বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। একক দেশ হিসেবে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর ঘটনাও এ দেশটিতেই। এছাড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ। একইসঙ্গে গত প্রায় এক বছরে ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। মানুষ কাজ হারিয়েছে। বেতন কমে গেছে। বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে বহু মানুষের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছয় দশমিক দুই শতাংশ। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতাগ্রহণের সপ্তাহখানেক আগে এই প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। সে সময় তিনি বলেন, 'এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা গত বেশ কয়েকটি প্রজন্ম কোনো দিন দেখেনি, কোনো দিন এমন সময়ের কথা ভাবতেও পারেনি।' তার মতে, দুটি ধাপে এই প্যাকেজ মানুষের উপকার করবে। প্রথমত, অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে আবারও চাঙ্গা করবে। দ্বিতীয়ত, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার জন্য সহায়ক হবে। এই সহায়তা প্যাকেজে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, সবই মার্কিনিদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য। এই অর্থায়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণে সহায়ক হবে, কল-কারখানা, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হবে। এছাড়া আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার বেকার ভাতা হিসেবে ৩০০ ডলার করে দেবে এবং জনপ্রতি একজন করদাতা ১৪০০ ডলারের একটি চেক পাবেন। আর যৌথভাবে করদাতারা পাবেন ২৮০০ ডলার। একইসঙ্গে প্রতিটি নির্ভরশীল শিশুও ১৪০০ ডলার করে পাবে। বর্তমান বেকার ভাতা আইনের মেয়াদ ১৫ মার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই এই বিলটিকে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করতে চান ডেমোক্রেটরা। মহামারির কারণে রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর বাজেটে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণে এ বিলে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ত্রাণ বরাদ্দও রাখা হয়েছে।