বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
সব মার্কিন সেনা সরছে

আফগান যুদ্ধে ইতি টানার সিদ্ধান্ত বাইডেনের

ম ২০ বছর আগের ক্ষত ২০২১ সাল পর্যন্ত টানার যৌক্তিকতা নেই :বাইডেন ম আফগানিস্তান ছাড়ছে ন্যাটোও ম যুদ্ধে আমরাই জিতেছি, হেরেছে যুক্তরাষ্ট্র :তালেবান
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনে যদিও গুঞ্জন ছিল, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন, সেটিকেই গুরুত্ব দিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী ১ মে'র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আর শেষ হবে ৯-১১-এর মধ্যে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

২০০১ সালের অক্টোবরে হোয়াইট হাউসের যে কক্ষটি থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ, সেই একই কক্ষ থেকে বুধবার দেশটি থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘোষণা করে বাইডেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি টানার সময় এসেছে।' ওই ঘোষণায় তিনি বলেন, 'আফগানিস্তানে একটি আদর্শ সময় আসবে, তখন সেনা প্রত্যাহার করা হবে, এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা মোটেও কার্যকর ও সমীচীন কোনো পথ হতে পারে না।'

বাইডেন বলেন, 'আমরা আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম, কারণ ২০ বছর আগে আমাদের দেশে একটি ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে ২০২১ পর্যন্ত সেই হামলার জের টানার কোনো যৌক্তিকতা নেই।' তিনি আরও বলেন, 'এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে আফগানিস্তানে কর্মরত অনেক মার্কিন সেনাসদস্যের বাবা-মা, অভিভাকরাও যুদ্ধের শুরুতে সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন অনেক সেনাসদস্য সেখানে আছেন, নাইন-ইলেভেন (৯/১১) হামলার সময় যাদের জন্মও হয়নি। তাই প্রজন্মের পর ?প্রজন্ম ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।'

তবে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা নেওয়া হলেও দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে উলেস্নখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও আফগানিস্তানে আমাদের কূটনৈতিক ও মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দেশটির সরকারের প্রতিও যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন চালিয়ে যাবে।'

তালেবানসহ আফগানিস্তানের চরমপন্থি ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সবসময় সহযোগিতা করে যাবে বলেও ঘোষণায় উলেস্নখ করেছেন বাইডেন।

এদিকে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়ামা বার্নস দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের এক শুনানিতে বলেন, আফগান সোবাহিনীর যে অবস্থা, তাতে দেশটি থেকে বিদায় নিলে তারা তালেবানের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হবে। তার আগের দিন মঙ্গলবার দেশটির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করলে তালেবান তার পূর্ণ শক্তিতে এগোনো শুরু করবে।

অন্যদিকে বাইডেনের ঘোষণার পর অনাগত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি যদিও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন, তবে তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী উচ্চপর্যায়ের সরকারি কাউন্সিলের সদস্য আবদুলস্নাহ আবদুলস্নাহ বলেন, 'এখন আফগানিস্তানকে তালেবানের সঙ্গে সহাবস্থানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।' তিনি বলেন, 'তালেবান ও আফগান সরকার উভয়কেই এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে যে, যুদ্ধে উভয়পক্ষের ক্ষতি ছাড়া অন্য কোনো লাভ নেই।'

ইরানের সীমান্তঘেঁষা আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে বসবাসকারী রোইনা উসমানি বলেন, 'আমার মনে হয়, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আদর্শ সময় এটি নয়। যদি সত্যিই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে গত ২০ বছরে আমাদের যে অর্জনগুলো আছে, সব হুমকির মুখে পড়বে।'

উলেস্নখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক নিউইয়ার্কের 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার' টুইন টাওয়ারে হামলার পর ওই বছর অক্টোবরে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে মার্কিন-ন্যাটো বাহিনীর তিন লক্ষাধিক সেনা থাকলেও পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েক দফায় সেনাদের অধিকাংশই প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো।

বর্তমানে দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। তাদের প্রত্যাহারের ব্যাপারে ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন। সেই অনুযায়ী চলতি বছর ১ মে'র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল চুক্তিতে। জো বাইডেনের বুধবারের ঘোষণায় সমাপ্তি ঘটল সেই অনিশ্চয়তার।

আফগানিস্তান ছাড়ছে ন্যাটো বাহিনীও

অন্যদিকে প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করা মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা পর এবার জানা গেল, শুধু মার্কিন বাহিনীই নয়, আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে শুরু করবে ন্যাটো সেনারাও।

গত বছরের ২৯ ফেব্রম্নয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, তালেবান যদি প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট আফগানিস্তান থেকে পরবর্তী ১৪ মাসের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।

গত বুধবার সেনা প্রত্যাহারে বাইডেনের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, তারাও আগামী ১ মে থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করবেন। আফগানিস্তানে বর্তমানে অ-মার্কিনি ন্যাটো সেনা রয়েছে অন্তত সাড়ে সাত হাজার। স্টলটেনবার্গ বলেন, 'আমরা ১ মে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেখান থেকে আমাদের সব সেনা সরিয়ে নিতে চাই।' অবশ্য ন্যাটোর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এটাও বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে তালেবান যদি আক্রমণ করে, তাহলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

যুদ্ধে আমরা জিতেছি, যুক্তরাষ্ট্র হেরেছে : তালেবান

এদিকে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া ঘোষণাকে নিজেদের বিজয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় হিসেবে দাবি করেছে তালেবান। 'বিবিসি'র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন তালেবানের সিনিয়র নেতা হাজি হেকমত।

তালেবানের এই নেতা গত শতকের ৯০-এর দশকে সশস্ত্র ওই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময় তালেবান আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে তিনি বালখ জেলার তালেবানের ছায়া মেয়র। হাজি হেকমত বলেন, 'আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি এবং যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত। আমরা শান্তি, একই সঙ্গে যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে