শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

মৃতু্যতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল ভারত

ম কোভিড-১৯ এর ভারতীয় ধরন নিয়ে চিন্তিত বিশ্ব ম ভারত ভ্রমণে সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ম আক্রান্ত রাহুল গান্ধী
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনায় মৃতু্যতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল ভারত। মঙ্গলবার সকালে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও এক হাজার ৭৬১ জনের মৃতু্য হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ড এটিই। এ নিয়ে ভারতে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৮০ হাজার ৫৫০। অবশ্য মৃতের রেকর্ড বাড়লেও আগের দিনের তুলনায় সংক্রমণ কমেছে। ১৩ দিন পর দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমলেও তা এখনো আড়াই লাখের ওপর। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে দুই লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার কম। মূলত শনাক্ত এক লাখ ছাড়ানোর পর থেকেই ভারতে দৈনিক সংক্রমণ রোজ বেড়েছে। সেই প্রবণতায় ছেদ পড়ল মঙ্গলবার। তবে সংক্রমণ কমলেও দৈনিক মৃতু্য বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

এদিন মহারাষ্ট্রে ৫৮ হাজার ৯২৪ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে ৩৫১ জন। রাজ্যটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৯৮ হাজারে এবং মোট মারা গেছে ৬০ হাজার ৮২৪ জন। মোট আক্রান্ত বিবেচনায় মহারাষ্ট্রের পরই রয়েছে যথাক্রমে কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ।

আশঙ্কাজনক সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দিলিস্নতে চলছে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২৪০ জনের মৃতু্য হয়েছে এবং সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৬৮৬ জনের শরীরে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত থেকে কেরালায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কেরালায় ১৩ হাজার ৬৪৪ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে রোগী বৃদ্ধির জেরে হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলোর শয্যা প্রায় ভর্তি। একই শয্যায় দুই রোগীর শুয়ে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে কয়েকটি রাজ্যে। এমনকি অক্সিজেন না পেয়ে কোভিড রোগীর মৃতু্যর খবরও আসছে।

দৈনিক মৃতু্য এই পর্যায়ে চলে যাওয়ায় হাসপাতালের মর্গের বাইরে, শ্মশান এবং কবরস্থানে মরদেহের সারি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, তা দেখা যায়নি করোনার প্রথম পর্বে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের মতো এর দ্বিতীয় ঢেউকেও পরাজিত করতে সক্ষম হবে ভারত। কোভিড পরিস্থিতি এবং টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে এক পর্যালোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'কঠোরভাবে করোনাবিধি পালনের মাধ্যমে আরও দ্রম্নতগতিতে সমন্বয় সাধন করে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব।' সংক্রমণের গতি রুখতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা, সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং তাদের চিকিৎসার ওপর জোর দিয়েছেন মোদি।

এদিকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আগামী ১ মে থেকে ১৮ বছর হলেই টিকা নেওয়া যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ পূর্বনির্ধারিত মূল্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে এবং বাকি অংশ রাজ্য সরকার ও বাজারে বিক্রির জন্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

\হ

করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে চিন্তিত বিশ্ব

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে জোর গতিতে টিকা কর্মসূচি চালানো হলেও গবেষণা বলছে, 'ডবল মিউট্যান্ট' (দুই বার রূপ বদলানো) হওয়া ভারতের করোনার এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে টিকা নেওয়া মানুষও। এমনকি ভারত ছাড়িয়ে এই ধরন ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। তাই করোনার এই ধরন নিয়ে চিন্তিত বিশ্ব।

ভারতে শনাক্ত ভাইরাসের এই ধরনটি অনেক বেশি সংক্রামক। গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে ভারতে দৈনিক ৯০ হাজারের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি প্রতিদিন তিনগুণ বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত মার্চের শেষের দিকে ভারতে করোনার নতুন ও ডবল মিউটেশনের খোঁজ মেলে। এরপর থেকেই দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এসে যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রজাতির 'ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর'র প্রভাবেই সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, করোনার এই নতুন ধরনটি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক। ভারতের ১৮টি রাজ্যের পর তা শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু তাই নয়, টিকা গ্রহণ করা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধও ক্ষমতা কিছুটা হলেও ভাঙতে সক্ষম ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি। আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিকেও আবার আক্রান্ত করতে সক্ষম ভাইরাসের ডবল মিউটেশান। তাই বিজ্ঞানীরা ভারতের করোনার এ ধরন নিয়ে বেশি চিন্তিত।

ভারতে পাওয়া ডবল মিউটেন্ট প্রজাতির এই করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউইয়র্কে গবেষণা হয়েছে। নতুন এই ধরনটি ঠিক কতটা বিপজ্জনক, তা জানতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতে এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের শরীরে মূলত ভাইরাসের তিনটি বিদেশি ধরন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ধরন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত ধরনও পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নাগরিকদের ভারত ভ্রমণে সতর্কতা

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের যে ভয়াবহ রূপ, এই অবস্থায় অপরিহার্য না হলে মার্কিন নাগরিকদের ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থাটির জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের করোনা পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ' বলে উলেস্নখ করা হয়েছে।

সিডিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরোপুরি টিকা নেওয়া পর্যটকদেরও করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত হওয়ার এবং সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য পর্যটকদের এখন যে কোনো কারণে ভারত ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত।

করোনায় আক্রান্ত রাহুল গান্ধী

এবার করোনার কবলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার দুপুরে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। টুইট করে নিজেই এই দুঃসংবাদ দিয়েছেন। সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতির শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে। তবে, এখনো হাসপাতালে ভর্তি হননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে