শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
শান্ত থাকার আহ্বান মমতার

সহিংসতার আগুনে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ

ম এখন পর্যন্ত নিহত অন্তত ১৪ টার্গেটে রাজনৈতিক কার্যালয় ম পরিস্থিতি জানতে চেয়ে মোদির ফোন রাজ্যপালকে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ মে ২০২১, ০০:০০
ঘরবাড়ি ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। অবশ্য ফল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা। মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন এই সহিংসতার বলি হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তৃণমূল বা বিজেপি- দুই দলেরই কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ

ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার আগুনে পুড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর একের পর এক কার্যালয়। আবার মৃতদের বেশিরভাগই বিজেপির কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করেছে সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনে পরাজিত এই দলটি। এ অবস্থায় সহিংসতা পরিহার করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিকে, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন মমতা। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসা এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে। করোনা মহামারির সময় মানুষের পাশে থাকতে হবে। শান্ত থাকুন, অভিযোগ থাকলে পুলিশের কাছে জানান। শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পুলিশের। বিজেপি, কেন্দ্রীয় বাহিনী যদিও অনেক অত্যাচার করেছে।'

তিনি বলেন, 'বর্ধমানে তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছে বিজেপি। কোচবিহারে আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। কোচবিহারের এসপি বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। কয়েকজন পুলিশ বিজেপির হয়ে আসরে নেমেছিল। সেসব পুলিশ কর্মকর্তা মনে করে, ঠিক কাজ করেছেন, আমি মনে করি না। আইন সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের।'

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ?'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন, এটা ভালো দিক। পরিস্থিতি যদি শান্ত না হয়, তবে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ধরনায় বসবো। নির্বাচনি ফলের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আমাদের দলের কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী মারা গেছে। হাজারখানেক বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। জয়ের পরও তৃণমূলের এই সহিংসতা কেন?'

অন্যদিকে, রক্তপাতের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে আজ (বুধবার) মমতা শপথের দিন পশ্চিমবঙ্গে 'ধিক্কার দিবস' এবং দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিজেপি। ধিক্কার দিবসের কর্মসূচিতে যোগদান এবং আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের মঙ্গলবারই পশ্চিমবঙ্গ সফরের কথা ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা'র। কিন্তু 'হামলার' অভিযোগে আজ ধরনায় বসবেন তিনি। এ ছাড়া রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন নাড্ডা। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে হামলা প্রতিহত করা যায়, সেটা নিয়েই তিনি মূলত রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এ ছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় টার্গেট করা হচ্ছে বিরোধীদের। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।'

বিজেপি জানিয়েছে, সহিংসতায় তাদের অন্তত ছয় কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলার শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। অনেকের বাড়িঘর ও দলীয় অফিসে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

তৃণমূল জানিয়েছে, বিজেপির কর্মীরা তাদের অন্তত পাঁচ সমর্থককে হত্যা করেছে। এর মধ্যে শুধু পূর্ব বর্ধমানেই তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। হুগলিতে নিহত হয়েছেন আরও একজন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে বাম-কংগ্রেসের অংশীদার ইনডিয়ান সেকু্যলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) এক কর্মী নিহত হয়েছেন।

এদিকে, আজ সকাল ১০-৪৫ মিনিটে তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে শপথ অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যাও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। এরপর আগামীকাল ও পরশু শপথ নেবেন বিধানসভা নির্বাচনের নবনির্বাচিত বিধায়করা।

রাজ্যপালকে ফোন মোদির, টুইট করলেন ধনখড়

এদিকে, ভোট-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মঙ্গলবার রাজ্যপালকে ফোন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটারে সে কথা জানিয়েছেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়-ই। রোববার ফল প্রকাশের পর থেকেই বেশকিছু জায়গায় সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয় নিয়েই মোদি খোঁজ নিলেন রাজ্যপালের কাছ থেকে।

ধনখড় টুইটে লিখেছেন, 'রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ফোনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে