সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখেঁাজ

প্রবেশের দুই ঘণ্টার মধ্যেই খুন খাশোগি!

অপেক্ষায় ছিল সৌদির রাষ্ট্র্রীয় ‘কিলিং স্কোয়াড’ রিয়াদের কাছে দ্রæত জবাব চেয়েছে যুক্তরাজ্য

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কনস্যুলেটে প্রবেশ করছেন জামাল খাশোগি
সৌদি আরবের সবোর্চ্চ নেতৃত্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় সৌদি যুবরাজের সমালোচক হিসেবে পরিচিত দেশটির খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে। সেদিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে (রাষ্ট্রদূত নেই এমন দূতাবাস) প্রবেশের দুই ঘণ্টার মধ্যেই খুন করা হয় তাকে। ‘নিউইয়কর্ টাইমস’কে তুকির্ কমর্কতার্রা এমন কথা জানিয়েছেন। এদিকে, যুক্তরাজ্য নিখেঁাজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির বিষয়ে রিয়াদের কাছে দ্রæত জবাব চেয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, নিউইয়কর্ টাইমস, দ্য টাইমস, আল-জাজিরা তুরস্কের উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কমর্কতার্রা মনে করেন, জামাল খাশোগিকে খুন বা অপহরণের জন্য আগে থেকেই ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে অপেক্ষমান ছিল সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ‘কিলিং স্কোয়াড’ বা খুনি বাহিনী। তারা ২ অক্টোবর দুপুর পযর্ন্ত ঘাপটি মেরে অপেক্ষায় ছিল, কখন খাশোগি হাজির হন। কনস্যুলেটে এটা ছিল তার দ্বিতীয় প্রবেশ। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চ‚ড়ান্ত করতে এর আগে আরও এক দফায় সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তখন তাকে জানানো হয়, কাগজপত্র ঠিক নেই। মঙ্গলবার আবার আসতে হবে। সে অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় কনস্যুলেটে গিয়েই সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় হিট স্কোয়াডের শিকারে পরিণত হন তিনি। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ দেশটির কমর্কতার্রা অবশ্য সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার খবর নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, সেদিন কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গেছেন খাশোগি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সৌদি আরবের কাছে খাশোগির দূতাবাস ছাড়ার প্রমাণ চেয়েছেন। সৌদি আরব প্রমাণ দেখাতে ব্যথর্ হলে বিষয়টি নিয়ে বিশদ তদন্তের কথা বলেন তুকির্ নিরাপত্তা কমর্কতার্রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুকির্ কমর্কতার্রা ‘নিউইয়কর্ টাইমস’র কাছে সৌদি আরবের এমন কমর্কাÐকে ‘যথেষ্ট নোংরা’ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই কমর্কতার্ বলেন, সাংবাদিক খাশোগি যেদিন নিখেঁাজ হন, সেদিনই ১৫ সৌদি এজেন্ট (রাষ্ট্রীয় কিলিং মিশনের সদস্য) দুটি চাটার্র ফ্লাইটে তুরস্কে এসে পেঁৗছায়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই তারা তুরস্ক ছেড়ে যায়। আঙ্কারা শনাক্ত করেছে, ওই ১৫ জনের সবাই বা অধিকাংশই সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কিংবা সরকারি চাকরিজীবী। তাদের মধ্যে একজন ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞও ছিলেন। সম্ভবত নিহতের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলাদা করতে সহায়তার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। বিষয়টি সম্পকের্ অবগত আরেক কমর্কতার্ নাম প্রকাশ না করার শতের্ ‘দ্য টাইমস’কে বলেছেন, ওই হত্যাকাÐের একটি ভিডিও হাতে পেয়েছে তুকির্ গোয়েন্দারা। কমর্কতার্রা নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও এরদোয়ানের একজন সহযোগী মঙ্গলবার প্রকাশ্যেই ওই ভিডিও নিয়ে কথা বলেছেন। কেমাল ওজতুকর্ নামের সরকারপন্থি এই কলামিস্ট বলেন, তাকে খুনের মুহ‚তের্র ভিডিও রয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় সৌদি কতৃর্পক্ষকে হুশিয়ারি দিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, বন্ধুত্ব সমান মূল্যবোধের ওপর নিভর্র করে। হান্ট সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের কাছে ফোন করে খাশোগির নিখেঁাজ বিষয়ে ‘যুক্তরাজ্য জরুরিভিত্তিতে উত্তর প্রত্যাশা করছে’ বলে জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি তুকির্ বাতার্সংস্থা ‘আনাদোলু এজেন্সি’কে বলেন, সৌদি কনস্যুলেট থেকে খাশোগির নিখেঁাজের ঘটনাটি ‘মারাত্মক উদ্বেগজনক’। তিনি বলেন, ‘যদি তার মৃত্যু ও এর ফলে উদ্ভুত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সত্য হয়, তাহলে এটা সত্যিই দুঃখজনক।’ শ্যামদাসানি আরও বলেন, ‘খাশোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর ঠিক কী ঘটছে, তা নিয়ে এখন অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তাই এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করার আগে আমরা বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া পযর্ন্ত অপেক্ষা করবো।’ এদিকে, সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখেঁাজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ খাশোগির নিখেঁাজের ঘটনা তদন্তে সহযোগিতার জন্য তুরস্ক ও সৌদি আরবের প্রতি আহŸান জানিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। তুরস্কের প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের আহŸান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সৌদি যুবরাজের (ক্রাউন প্রিন্স) কট্টর সমালোচক ৫৯ বছর বয়সী খাশোগি বছরখানেক ধরে স্বেচ্ছা নিবার্সনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। এ সময় ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’র মতামত পাতায় লেখালেখি করেছেন তিনি। খাশোগির নিখেঁাজের ঘটনায় সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব চাওয়া উচিত বলে দাবি জানিয়েছে মাকির্ন এ গণমাধ্যমটি।